TeaDay2025
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস (TeaDay2025)। চায়ের কাপে ভাসে না শুধু দুধ-চিনি-পাতা, ভেসে থাকে আবেগ, আত্মীয়তা আর প্রতিবাদের ইতিহাসও। বাঙালির সকাল শুরু হয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, আড্ডার আসর জমে এক কাপ গরম লাল চায়ে। আজকের দিনে তাই কলকাতা থেকে কালিম্পং, সর্বত্র চায়ে চায়ে উৎসব।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১৯ সালে ২১ মে-কে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য—বিশ্বজুড়ে চা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, চা উৎপাদনের টেকসইতা এবং পরিবেশ-বান্ধব চাষাবাদকে গুরুত্ব দেওয়া।
চা ও বাঙালি: সম্পর্কের সীমানা নেই
কলকাতার গলির মোড়ে মোড়ে চা বিক্রেতা, অফিসপাড়ার টেবিলের কোণে কাগজের কাপ—চা যেন শুধু পানীয় নয়, একটা লাইফস্টাইল। দার্জিলিং চা, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে GI ট্যাগপ্রাপ্ত, সেটি তো বাংলার অন্যতম গর্ব। উত্তরবঙ্গের বাগানগুলো শুধু নয়, এখন দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদিয়া ও হুগলির অনেক গ্রামেও ছোট পরিসরে চা চাষ শুরু হয়েছে।
নীতা আম্বানির প্রিয় চায়ের কাপের দাম ৩ লাখ টাকা! জানুন এর পিছনের গল্প
কলকাতার কলেজ স্ট্রিট বা রাজাবাজারের মতো আড্ডাকেন্দ্রিক এলাকায় আজ চায়ের দোকানে বিশেষ অফার দেখা গেল। অনেকে আবার ‘এক কাপ চা, এক মিনিট কবিতা’ নাম দিয়ে ছোট ছোট পারফর্মেন্সও করছেন।
শ্রমিকদের প্রেক্ষাপটে আজকের দিন
আন্তর্জাতিক চা দিবস মানে কেবল ভোক্তাদের উৎসব নয়, এটা শ্রমিকদের জন্য সচেতনতারও দিন। উত্তরবঙ্গের বহু চা বাগান আজও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে ব্যর্থ। অনেক বাগানে নেই সঠিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বা শিক্ষার সুযোগ। সরকারের নতুন স্কিম ‘চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প’ কিছুটা স্বস্তি এনেছে ঠিকই, তবে বহু পথ এখনও বাকি।
পরিবেশ-সচেতন চা চাষ এখন সময়ের দাবি
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চা উৎপাদনে ধাক্কা এসেছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির বাগানগুলিতে কমছে ফলন। তাই আজ চা দিবসে বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব ও জৈব চা উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। ‘গ্রিন টি’ এবং ‘হ্যান্ডক্রাফটেড টি’-র জনপ্রিয়তাও বাড়ছে শহরাঞ্চলে।
চা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
চা কেবল চাষ বা পানীয় নয়, এটি বাঙালির সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখায়, চা বারবার ফিরে এসেছে সম্পর্কের, ভাবনার বা বিরতির রূপক হিসেবে। আজকের দিনে শহরের কিছু বইয়ের দোকানে ‘চা ও সাহিত্য’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীও হয়েছে।
এক কাপ চা বদলে দিতে পারে দিনের মেজাজ, খোলাতে পারে বন্ধুর মুখ। কিন্তু চা দিবসে আমাদের মনে রাখতে হবে, এই এক কাপ চায়ের পেছনে যাঁদের শ্রম জড়িয়ে, তাঁদের জীবনেও যেন চা-র মতোই উষ্ণতা আসে।
আরও পড়ুন :
চলুন যাই শীতলতার ছোঁয়া নিতে নেপালে