Netaji Favourite Cabin
শান্তিপ্রিয় রায় চৌধুরী: ৬৯ সূর্য সেন স্ট্রিট-এর সেই ঐতিহ্যবাহী ফেভারিট কেবিন (Netaji Favourite Cabin)। যার বয়স এখন ১০৭ বছর পেরিয়ে গেছে। এই কেবিনের পাশ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু তারা কি জানেন এই কেবিনের গুরুত্ব। পুরনো দিনের কিছু মানুষ হয়তো জানেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এই কেবিনের গুরুত্ব জানেনই না। সেই কাহিনীটা পরে জানাবো। প্রথমেই জেনে নিন এই কেবিনের (Netaji Favourite Cabin) ইতিহাস।
১৯১৮ সালে অর্থাৎ ১০৭ বছর আগে বাংলাদেশের একজন মানুষ যার নাম দিলীপ কুমার বড়ুয়া, তিনি এখানে এসে এই কেবিনের নাম ফেভারিট দিয়ে চা বিক্রি শুরু করেন। তখন চা বিক্রি হতো দু’পয়সায়। এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়।
এবার শুনুন এই কেবিনের (Netaji Favourite Cabin) ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা। এই কেবিনের বর্তমান মালিক যে টেবিলটা সামনে এখন বসেন তার ডানদিকে আছে শ্বেত পাথরের সুরক্ষিত একটা টেবিল। সেদিন এই টেবিলটা ঘিরে জড়ো হতেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু মনীষী।
এই ৬৯ নম্বর সূর্য সেন স্ট্রীট এর পাশেই ছিল কল্লোল পত্রিকা গোষ্ঠীর অফিস। অফিসের কাজকর্ম মিটিয়ে প্রায় দিনই এই কেবিনে চলে আসতেন সেই পত্রিকা অফিসে কাজ করা বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। সবাই মিলে চায়ের আড্ডায় জমে উঠতো তর্ক বিতর্ক। নানা দেশের সাহিত্য নিয়ে চলত আলোচনা। আর এই কেবিনের একেবারে কোনের শ্বেত পাথরের টেবিলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে বসে থাকতেন। আর এখানে আসতেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় শিবরাম চক্রবর্তীর ঋত্বিক ঘটক রামমোহন লোহিয়ারা।এসবের পাশাপাশি অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীও আসতেন। যার মধ্যে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সদস্য গণেশ ঘোষ অম্বিকা চক্রবর্তীও।
সেই সময় নজরুল যখন ব্রিটিশ বিরোধী কবিতা গান লিখে জনমানুষে গভীরভাবে আলোকপাত করেছেন তখন নেতাজি, নজরুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য এখানে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার এবং এই কেবিনের কোণের শ্বেত পাথরের ছোট্ট টেবিলের সামনে বসে কি জানি কি সব ভেবেছিলেন ওই দুই গুনি ব্যক্তি। সেই কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক লাগে একটি চায়ের কেবিনে এত কালজয়ী মানুষ এসেছেন দশকের পর দশক!
ভাবা যায়, সুভাষচন্দ্র বসুর মতন মানুষ এখানে বসে চা খেয়েছেন (Netaji Favourite Cabin) আর আপনিও একবার এখানে এসে সেই টেবিলটা স্পর্শ করে নিজেকে রোমান্টিক করুন না। তবে ভাবতে ভাবতে আপনিও চলে যাবেন অন্য জগতে! আর শুধুই ভাবতে ভাবতে নিজেকে প্রশ্ন করবেন সত্যিই এখানে নেতাজি এসেছিলেন!