Bihar Snake Festival
ক্লাউড টিভি ডেস্ক | ১৮ জুলাই, ২০২৫ : সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে এক ব্যতিক্রমী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভিডিও। ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের সমস্তিপুর জেলার সিঙ্ঘিয়া ঘাটে, যেখানে শত শত ভক্ত সাপ নিয়ে অংশ নিয়েছেন নাগ পঞ্চমী উপলক্ষে আয়োজিত এক ঐতিহ্যবাহী পূজায় (Bihar Snake Festival)।
ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্য—শিশু, কিশোর, যুবা, এমনকি বৃদ্ধরাও—সাপকে শরীরে জড়িয়ে বা হাতে নিয়ে পূজায় অংশ নিচ্ছেন। এই অভাবনীয় দৃশ্য অনেকে দেখছেন বিস্ময়ে, আবার কেউ দেখছেন এটি ঐতিহ্য আর ভক্তির নিদর্শন হিসেবে।
শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য
এই অনুষ্ঠানটি মা ভগবতী মন্দির প্রাঙ্গণে পূজার মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর ভক্তরা সমবেত হন বুড়ি গণ্ডক নদীর তীরে, যেখানে সাপকে সঙ্গে নিয়ে পূজা, আরতি ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।
স্থানীয়দের মতে, এই নাগপঞ্চমী অনুষ্ঠানটির বয়স শত বছরেরও বেশি। মিথিলা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা—খাগড়িয়া, সাহারসা, বেগুসরাই, মুজাফফরপুর সহ দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ এই পূজায় অংশ নিতে আসেন। এটি শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং আঞ্চলিক ঐতিহ্য, পারিবারিক সম্মিলন ও আত্মিক সংযোগেরও এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।
সাপ ও মানবের সহাবস্থান: ভয় নয়, ভক্তি
এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো সাপের সঙ্গে ভক্তদের স্বাভাবিক মেলামেশা। বহু পরিবার নিজেরা সাপ সংগ্রহ করেন, কেউবা স্থানীয় সাপুড়েদের থেকে সাপ নিয়ে আসেন। এরপর সেই সাপকে জড়িয়ে কিংবা হাতে ধরে পূজায় অংশ নেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কিশোর একটি সাপ গলায় জড়িয়ে আছে, একটি বয়স্কা মহিলা স্নেহভরে একটি গোখরো হাতে নিয়ে প্রার্থনা করছেন। এসব দৃশ্য দেখে নেটিজেনদের অনেকে যেমন ভয়ে আঁতকে উঠছেন, তেমনি অনেকে বিস্ময়ে মন্তব্য করছেন, “এ যেন এক অন্য রকম ভক্তি”।
মুম্বাই বিমানবন্দরে বিষধর সাপসহ পাচারকারী আটক: থাইল্যান্ড থেকে চোরাচালান চক্রের চাঞ্চল্যকর উদ্ঘাটন
অনন্য নজির গড়লেন দীপিকা পাড়ুকোন: হলিউড ওয়াক অব ফেম-এ প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী
নারীদের বিশেষ পূজা ‘গহ্বর’-এ
এই অনুষ্ঠান শুধু পুরুষদের নয়, নারীরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় নারীরা একটি স্থানীয় গহ্বর (গর্ত বা খোলা মাটি) এলাকায় বিশেষ পূজা করেন নাগ দেবতার উদ্দেশ্যে। এই পূজায় তারা নিজেদের পরিবার, সন্তানের স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সুরক্ষার প্রার্থনা করেন।
একজন স্থানীয় নারী পূজারি জানান, “এই পূজা আমাদের পূর্বপুরুষের সময় থেকেই চলে আসছে। সাপ আমাদের কাছে দেবতা, ভয় নয়—ভক্তির প্রতীক।”
নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসা
বহু মানুষ ভিড় জমালেও এ বছর কোনও সাপের কামড় বা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় স্বাস্থ্য কর্মী ও সাপ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিত রাখা হয়েছিল, যাতে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
স্থানীয় এক যুবক বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি এই উৎসব। সাপকে ভয় নয়, শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। ওরাও জানে, পূজায় এসে কেউ তাদের ক্ষতি করবে না।”
এই ধরণের উৎসব সম্পর্কে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক অনুপম ঝা বলেন, “এটি কেবল ধর্মীয় চর্চা নয়, বরং এক গভীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি। মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের এমন নজির আজকের যুগে বিরল।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও পশুপাখির প্রতি সহানুভূতি জরুরি, তবুও এমন অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিক থেকেও মনোযোগ দাবি করে।”
আরও পড়ুন :
জাপানে ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে ঠাকুমা – দিদা ! একাকীত্ব কাটাতে অভিনব উদ্যোগ ‘ওকে গ্র্যান্ডমা’
যুক্তরাজ্যে ১৬ বছর বয়সিদের ভোটাধিকার! সমীক্ষায় দেখা গেল, তারাই ১৮-র চেয়ে বেশি আগ্রহী ভোটদানে