RIPShibuSoren
ক্লাউড টিভি ডেস্ক | ৪ আগস্ট ২০২৫ : ঝাড়খণ্ডের রাজনীতির এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। প্রয়াত হলেন রাজ্যের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (JMM) প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেন (RIPShibuSoren)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কিডনি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছিলেন। দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছিল। তবে সোমবার রাতে শেষরক্ষা হল না।
ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত সোরেন সামাজিক মাধ্যমে বাবার মৃত্যুসংবাদ জানান। তিনি লেখেন,
“আমার প্রিয় বাবা, পথপ্রদর্শক, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের প্রাণপুরুষ আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর জীবনের আদর্শ, লড়াই, সাহস আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে।”
শিবু সোরেন শুধু একজন রাজনীতিক নন, ছিলেন আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারি। ১৯৭০-এর দশকে ‘সাঁওতাল হুল’ এবং আদিবাসীদের জমি ও জল-জঙ্গলের অধিকারের জন্য শুরু হওয়া আন্দোলনেই তিনি রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপন করেন। পরে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
তিনি তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন—২০০५, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারে কয়লা ও খনি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শিবু সোরেনের রাজনৈতিক কেরিয়ারে বিতর্কও ছিল। ১৯৭৫ সালে এক হত্যাকাণ্ডের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, যদিও পরে তিনি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন। এছাড়া কয়লা দফতরে দায়িত্ব পালনকালীন কিছু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তবুও, তাঁর জনপ্রিয়তা কখনও আদিবাসী সমাজে ক্ষুণ্ণ হয়নি।
শিবু সোরেনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) লেখেন,
“শিবু সোরেন ছিলেন একটি আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর গোটা রাজনৈতিক জীবনজুড়ে আদিবাসীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। পরিবার-পরিজনদের প্রতি আমার সমবেদনা।”
বিহারে ‘ডাইনি বিদ্যার’ অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা, তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু রাজনৈতিক নেতা শোকবার্তা দিয়েছেন। মমতা বলেন,
“শিবু সোরেন ছিলেন গণআন্দোলনের নেতা। তাঁর মতো মানুষের প্রস্থানে ভারতের রাজনীতি এক বড় অভিভাবককে হারাল।”
ঝাড়খণ্ড সরকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই তিনদিন রাজ্যজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সরকারি অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হবে। দেহ ঝাড়খণ্ডে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলেই পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
শিবু সোরেনের মৃত্যু শুধু ঝাড়খণ্ডের নয়, গোটা ভারতের আদিবাসী রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের অবসান। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ, আন্দোলনের নেতা এবং ক্ষমতায় থেকেও সর্বহারা শ্রেণির পাশে দাঁড়ানোর প্রতীক। আদিবাসী সমাজের অধিকার ও আত্মপরিচয়ের সংগ্রামে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন :
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা: তৃণমূল কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের ইঙ্গিত
লর্ডস থেকে ওভাল: সিরাজের বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন, পরাজিত ব্রিটিশ। ওভাল যেন পলাশী 2.0