SundalandSecrets
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ইতিহাসের পাতায় আরেকটি চমকপ্রদ সংযোজন। ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের তলদেশে পাওয়া গেছে এক রহস্যময় প্রাচীন শহর (SundalandSecrets) , যার বয়স আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার বছরেরও বেশি। জাভা ও মাদুরা দ্বীপের মধ্যবর্তী মাদুরা প্রণালিতে আবিষ্কৃত এই শহরটি আক্ষরিক অর্থেই ভূতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্ব জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শহরটির নিচে পাওয়া গেছে মানুষের প্রাচীন পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাসের একটি খুলি এবং হাজারো জীবাশ্ম।
নতুন এই আবিষ্কারের নেতৃত্বে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক হ্যারল্ড বার্গুইস এবং তার গবেষক দল। গবেষকদের মতে, শহরটি ছিল একসময়কার সুন্দাল্যান্ড নামের একটি প্রাগৈতিহাসিক ভূখণ্ডের অংশ। সুন্দাল্যান্ড এক বিশাল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমভূমি ছিল, যা বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে ছিল।
এই শহর বর্তমানে সমুদ্রের পলি ও বালুর নিচে চাপা পড়ে আছে এবং সম্ভবত এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে পানির নিচে চলে যায়।
গবেষণায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় যেটি, তা হলো হোমো ইরেক্টাস নামের মানুষের প্রাচীন পূর্বপুরুষের একটি খুলি উদ্ধার হওয়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুলিটি প্রায় ১.৪ লাখ বছর আগের এবং এটি এই অঞ্চলে হোমিনিন জনসংখ্যার উপস্থিতির প্রমাণ বহন করে।
শুধু মানুষের জীবাশ্ম নয়, এই শহর ঘিরে পাওয়া গেছে কমোডো ড্রাগন, মহিষ, হরিণ, হাতি সহ ৩৬ প্রজাতির প্রাণীর প্রায় ৬ হাজার জীবাশ্ম। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক খনি হয়ে উঠেছে।
বিশ্বে বাড়ছে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা, ২০৩০ সালের মধ্যেই ছোঁবে ১০ লাখের ঘর
হ্যারল্ড বার্গুইস বলেন, “এই শহর এবং এর আশেপাশের জৈব জীবাশ্ম আমাদের সামনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদি মানবজীবন ও আবহাওয়ার চিত্র স্পষ্ট করে তুলছে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন।”
বিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দাল্যান্ড নামের এই অঞ্চল এক সময় সমুদ্রতলের উপরে ছিল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশাল এক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জৈব পরিবেশ গড়ে তোলে। সেই অঞ্চলেই মানুষ ও প্রাণী মিলেমিশে বসবাস করত। তবে পরবর্তীকালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে অঞ্চলটি জলের নিচে চলে যায়।
এই আবিষ্কার আমাদের জানায়, প্রাচীন সভ্যতা সমুদ্রতলে হারিয়ে গেলেও তাদের অস্তিত্ব থেকে গেছে জীবাশ্মে ও নিদর্শনে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা শহরের স্থাপত্য, বসবাসযোগ্যতা, আবহাওয়ার অবস্থা এবং সামাজিক কাঠামো নিয়ে আরও গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা আশা করছেন, পরবর্তী ধাপে আরও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও প্রমাণ পাওয়া যাবে যা মানব ইতিহাসের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে।
এই আবিষ্কার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সমাজেও আলোড়ন তুলেছে। বহু গবেষণা সংস্থা এখন এই অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রতলে পাওয়া এই প্রাচীন শহর মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাসে এক বিশাল সংযোজন। হোমো ইরেক্টাসের অস্তিত্ব, প্রাণীর জীবাশ্ম এবং সুন্দাল্যান্ডের হারিয়ে যাওয়া ভূখণ্ড—সব মিলিয়ে এটি বিশ্ব ইতিহাসের এক নতুন রহস্যের দরজা খুলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন :
কলকাতা লিগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল এক গ্রুপে, ফিরছে গ্রুপ পর্বেই ডার্বির উত্তেজনা!
আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভেঙে যেতে পারে সব তাপমাত্রা রেকর্ড: ডব্লিউএমওর সতর্কবার্তা