TrumpTariffs India ExportCrisis
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হয়েছে ২৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে। এর ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হঠাৎ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতির ফলে ভারতের রপ্তানি আয়ের বিশাল অংশ ঝুঁকির (TrumpTariffs India ExportCrisis) মুখে পড়েছে, কর্মসংস্থানে বিরাট ধাক্কা আসতে পারে এবং জিডিপি বৃদ্ধিও স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের মোট রপ্তানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম বৃহত্তম বাজার, যেখানে বার্ষিক রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে টেক্সটাইল, রেডিমেড গার্মেন্টস, হীরা-জহরতের পণ্য, চামড়া, জুতো, গাড়ি, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য ভোক্তা সামগ্রী এখন থেকে দ্বিগুণ শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে কার্যত প্রতিযোগিতা হারাবে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্প আপাতত এই শুল্ক বৃদ্ধির আওতার বাইরে রয়েছে।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থার কারণে ভারতের রপ্তানি এক ধাক্কায় প্রায় ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর মধ্যে বিশেষত রত্ন ও গয়না, বস্ত্র, চামড়া এবং সমুদ্রপণ্যের মতো শ্রমনির্ভর খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে। প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন বাজার হারানোর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে এসব খাতে।
এছাড়া, ভারতের মোট জিডিপির প্রায় ২.৩ শতাংশ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি নির্ভর। সেই হিসেবে এই ধাক্কা ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে ০.২ থেকে ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত। এমনকি অনেক অর্থনীতিবিদ এক শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাই, ভারতের অর্থনীতির জন্য এই শুল্কনীতি নিছক বাণিজ্যিক ধাক্কা নয়, বরং বহুমাত্রিক সংকটের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে কেবল জিডিপি নয়, শ্রমসংস্থানের ওপরেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে চলেছে। সুরাত, তিরুপ্পুর, নয়ডা, আগ্রার মতো শিল্পনগরীগুলি, যেখানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারক ইউনিট অবস্থিত, তাদের মধ্যে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হতে পারে। কারণ নতুন শুল্কে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করলে মার্কিন বাজারে আর প্রতিযোগিতামূলক দাম রাখা সম্ভব হবে না। ফলে বহু প্রতিষ্ঠান হয় উৎপাদন বন্ধ করবে অথবা দেশীয় বাজারে বিক্রির চেষ্টা করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
যদিও ভারতের কিছু অর্থনীতিবিদ এখনই আতঙ্ক ছড়াতে নারাজ, তারা মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা, প্রিমিয়াম কনজাম্পশন বৃদ্ধি এবং NBFC খাতের উন্নতি সাময়িকভাবে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি সরকার ইতিমধ্যেই রপ্তানিকারকদের জন্য কিছু আর্থিক প্যাকেজ এবং ক্রেডিট সহায়তার ব্যবস্থা করতে চাইছে। তবে, কূটনৈতিক মহল স্বীকার করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক না মেরামত করলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ভারতকে এখনই আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের মতো নতুন বাজারে প্রবেশ বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাশাহী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ভারত অগ্রগতি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভারতের অন্যতম বড় ক্রেতা, সেই বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির ফলে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের মধ্যে এক বড় ধরনের ফাটল তৈরি হয়েছে। এর ফলে কেবল রপ্তানিকারকরাই নয়, বরং সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে দেশীয় শিল্প ও অর্থনীতি পর্যন্ত প্রভাবিত হবে। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে, ভারত সরকার কীভাবে এই বাণিজ্য সংকট মোকাবিলা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন :
ভারতের আইকনিক আমুল গার্ল : শশী থারুরের বোন শোভা থারুরই অনুপ্রেরণা, কি বলছে আমুল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবশরীরে ‘মাংসখেকো পরজীবী মাছি’ শনাক্ত