Poila Baisakh 2025
শান্তিপ্রিয় রায় চৌধুরী : মোবাইলে মেসেজ। হ্যাপি নিউ ইয়ার। ‘মিষ্টি মনি, ইন অ্যাডভান্স।’ কি হলো সাড়ে চার মাসের পুরনো মেসেজ এখন ।কেসটা কি! বিদ্যুৎ চমকের মত মনে পড়ল আর কয়েকদিন বাদে যে পহেলা বৈশাখ (Poila Baisakh 2025)। নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে যাওয়ার ভয়ে আগে ভাগেই এসএমএস। সবার আগে শুভেচ্ছা জানানোর উৎসাহে তিন দিন আগেই উইশ করতে থাকে। তা বলে হ্যাপি নিউ ইয়ার। অবশ্য এর থেকে আর কি আশা করা যায় জেন ওয়াইদের কাছ থেকে। আমি নিজেও তো এমনই বাঙালি ।
বং সাজবে বাঙালি (Poila Baisakh 2025) :
এবছর বাংলার কত সাল হবে? এই মুহূর্তে যদি ১০ জন মানুষকে জিজ্ঞাসা করা যায় তাহলে নয় জন ভুল উত্তর দেবে। আহা! তবু তো ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…’ সক্কাল সক্কাল তাঁতের শাড়ি আর নানা রঙের পাড় বিশিষ্ট ধুতি কিংবা নিদেন পক্ষে পাজামা -পাঞ্জাবি পরা লোকজনের ভিড়। ধুলো মাখা কালো ঝুলে ভরা ঘুলঘুলি বা কুলুঙ্গি থেকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবস কে টেনে বের করে পালনের হুড়োহুড়ি। ওঠো… সাজো বাঙালি হয়ে ওঠো আজকে। তা যতই রেডিমেড কোমরে ইলাস্টিক দেওয়া ধুতি বা আসাম প্রদেশের মেখলার কায়দায় শাড়ি হোক না কেন! বছরের অন্য দিনগুলো জিন্স, লেঙ্গিস দিয়ে পরিচয় কে ঢেকে রাখার মরিয়া প্রয়াস। কিন্তু নববর্ষের দিনটা পালন করতে আরও বেশি করে বাঙালি হয়ে উঠতে হবে।
বং চলেছে মন্দিরে :
বাঙালির এপ্রিলের হ্যাপি নিউ ইয়ারটা শুরু হয় কালীঘাট বা দক্ষিণেশ্বর দিয়ে। এখন অবশ্য জ্যোতিষ, সংখ্যা তত্ত্ববিদদের প্রচেষ্টায় বাঙালির দেব দিজে প্রবল ভক্তি। তাই ঐদিন সকাল-সকাল স্নান সেরে দক্ষিণেশ্বর বা কালীঘাট বা পাড়ার কালী মন্দিরে যাওয়া চাই। তবে এখানেও ভ্যারিয়েশন। প্রাধান্য পায় কালী। শিব- শীতলা- দুর্গা ব্রাত্য। যা-ই হোক বাঙালি কালচারের অঙ্গ বলে কথা। বছরের প্রথম দিনটাতো সকলেই ভালো করে শুরু করতে চায়। তাই না? ফেরার পথে কপালে ঘামে ঘেঁটে যাওয়া গোলা সিঁদুরের টিপ। আর হাতে পুজোর প্রসাদ। এরপর নিউ ইয়ার উইসের পালা। ভরসা এসএমএস বা মেল।
লাঞ্চে চাই কচি পাঁঠা (Poila Baisakh 2025):
পেসার-সুগার- হাই কোলেস্টেরল চুলোয় যাক।
আজ লাঞ্চে চাই কচি পাঁঠা। রিওয়াজীও হতে পারে। সঙ্গে পোলাও বা ফ্রাইড রাইস। ডাব হলে মন্দ হয় না। ছানার ডানলা বা পাঁচ রকম ভাজা, শুক্তো, ডাল ,কাতলা কালিয়া। আর খোসা সুদ্ধু আমের চাটনি।ওপরে ভাজা মসলা ছড়ানো। শেষ পাতে কাজু কিসমিস গুঁড়ো দুধের ঘন পায়েস। একবেলায় ক্যালোরিটা একটু বেড়ে গেল। তাতে কি হল। বাঙালি আবার কবে থেকে ফিগার ভুঁড়ি মেনটেন করতে শিখলো? বাঙালি এদিন পান্তা -পিৎজা ছেড়ে পুরোপুরি কোর্মা- কালিয়া- কষায় কব্জি ডোবাবে । দুপুরে একটু বেলা করে খেয়ে, বিকেল বিকেল বের হতে হবে হালখাতায়। অবশ্য দুপুরে একটু ভাত ঘুম! না, তাতে বাঙালির এলার্জি নেই। অফিসে বসে ঢুলতেও অবশ্য বাঙালির জুড়ি নেই। প্লিজ বাঙালির কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাবেন না। বিকেলে একটু সংস্কৃতি চর্চা। নিদেনপক্ষে রবীন্দ্র সদন। নইলে আপনার বাঙালিয়ানা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। রাতে আবার ককটেল ডিনারে ধুতি শাড়ি মাস্ট।
Jeet:”বাংলায় কাজ করাটাই আমার জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং।”এ কথা কেনো বললেন সুপারস্টার জিৎ?
লোকসভায় শূন্য, বিধানসভায় শূন্যের পরে এবারে রাজ্যসভায়ও শূন্য হবে সিপিএম!
শাড়ি- ধুতিতে ককটেল ডিনার (Poila Baisakh 2025) :
যে ধরনের পরব হোক না কেন ককটেল পার্টি এখন বাঙালির অন্দরমহলে ইন। দিনের বেলায় সাবেকিয়ানা আর রাতের বেলায় ইংলিশ আনা। মানে খাদ্যে নয় পানীয়ে, এখানে নৈব নৈব চ দিশি বাংলা। তাই অন্য কিছু। মেয়েদের শাড়ি আর পুরুষদের জন্য কঠোরভাবে ধুতি পাঞ্জাবি।পাজামাও চলবে না। অধ্যাপক থেকে আতেল সবাই ধুতিতে বেশ রঙিন। মেয়েরা এই গরমেও খড়মড়ে তাঁতে মাথায় জুঁই ফুলের মালা জড়িয়ে কি স্বাচ্ছন্দ। তবে বয়েজ বা
স্টেপকাটে সেভাবে মালা ম্যানেজ করা যায়, কিন্তু পাড়ের ধুতিটা সামলানো একটু টাফ হয়ে যাচ্ছে না। যাক গে, ককটেল পার্টির ড্রেস কোড বলে কথা। মধ্যরাত পার হয়ে গুটিগুটি বাড়ি। তবে হ্যাঁ, বাংলা নববর্ষের আবহ আনতে সবই ছিল শুধু কাঁসার থালা ধরে বুফেতে খাওয়া…। তবু তো আজ বাঙালি বাংলায় ফিরলো।
মধ্যরাতে ভরসা স্কাইপে :
ঘড়ির কাঁটা কখন বারোটা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এটা তো বাংলা বছর। ভোর না হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে বিদেশে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। ওখানেও চলছে বাংলা নববর্ষ পালন। এখন তো মিডিয়ার দৌলতেও দেশে বাঙালি পর্ব লাইভ দেখানো হয়। টেকনোলজির অগ্রগতির ফল ওয়েবকামে
দেখতে পাওয়া যায় লুচি, ছোলার ডাল ,পোলাও, ভেড়ার মাংস।
বাংলার মুখ দেখতে:
ক্যালেন্ডার বলছে পহেলা বৈশাখ এবারে মঙ্গলবার।যদি শনিবার পড়তো তাহলে দারুন হতো। তাহলে অফিসে ছোটখাটো ছুটি থাকতো, সোজা মন্দারমনি বা শংকরপুর ঘুরে আসা যেত। কিন্তু নববর্ষটাতো এনজয় করতে হবে। তাই মরিয়া হয়ে একটা ছুটি নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে ছুটিটা কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
বাংলা আর বাঙালি বা বঙ্গভূমি বা বিদেশ যা-ই হোক না কেন তফাৎ কি আর? মেনু বা ভেন্যু বা লাইফ স্টাইলে শুধু যা পরিবর্তন। পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে প্রণাম, মিষ্টি খাওয়া থেকে ধুতি পরায় বাঙালি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। পাতে যতই পান্তা থাকুক না কেন বাঙালির বোধ অনুভূতিগুলো থাকে বাঙালির মনে। তবে এটাই কি ‘বং কানেকশন’?
#PoilaBaisakh2025 #bongconnection #bengalinews #bengalinewyear #newyearwishes #পহেলাবৈশাখ #পয়লাবৈশাখ
আরও পড়ুন :
ইউটিউবেই ইরফানের কামব্যাক: আইপিএল থেকে বাদ পড়লেও বাড়ছে রোজগার
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের, উত্তপ্ত এলাকা শান্ত রাখতে কড়া পদক্ষেপ