BJPBackdropChange
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : কলকাতার ৬, মুরলিধর সেন লেন — পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য দফতরের প্রাণকেন্দ্র। এখানকার প্রতিটি সংবাদ সম্মেলন রাজ্য রাজনীতির জন্য বার্তাবহ। কিন্তু এবারে সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে উঠে গেল এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—নেতাদের ছবি। তার বদলে স্থান পেল শুধুমাত্র গেরুয়া রঙের ওপর বিজেপির চিহ্ন ‘কমলফুল’ (BJPBackdropChange)। নেতানির্ভরতার বদলে দল ও আদর্শের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে এক নতুন মাত্রা তৈরি করেছে।
২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত এই কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা বিজেপির মিডিয়া বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক, বর্তমানে মিডিয়া কো-ইনচার্জ পদে থাকা এক নেতা সামাজিক মাধ্যমে লেখেন:
“আজ একটি প্রতীকী কিন্তু গভীর অর্থবহ পরিবর্তনের সাক্ষী হলাম। সংবাদ সম্মেলনের ব্যাকড্রপে আর কোনও নেতার ছবি থাকছে না — থাকবে শুধু দলীয় প্রতীক। এটি নিছক গ্রাফিক পরিবর্তন নয়, বরং আমাদের আদর্শের মূর্ত রূপ: দেশ প্রথম, দল দ্বিতীয়, নিজেকে সবশেষে।”
এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, এটি কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং আদর্শগতভাবে সুসংগঠিত একটি বার্তা।
বিজেপির বাঙালিয়ানা এবং রাজনীতির এল-ক্লাসিকো: মোদি বনাম মমতা
রামের মুখে প্রাক্তন বামনাম : সাংগঠনিক রদবদলে লালমুখী হচ্ছে গেরুয়া শিবির
রাজনৈতিক বার্তা কী?
বেশ কয়েক বছর ধরেই বিজেপি তার সংগঠনিক আদর্শে ‘ব্যক্তিনির্ভরতা’ কমানোর কথা বলছে। বিভিন্ন রাজ্য ও জাতীয় স্তরে দেখা গেছে, ‘কলেক্টিভ লিডারশিপ’ বা ‘সমষ্টিগত নেতৃত্ব’ বিজেপির কেন্দ্রীয় বার্তা হয়ে উঠেছে। ব্যাকড্রপ থেকে মুখ্য নেতার ছবি সরে যাওয়ার অর্থ, দল এবার আরও স্পষ্টভাবে সেই আদর্শে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতার ছবি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ((BJPBackdropChange)) রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিবর্তনের বার্তাও হতে পারে না, বরং এটি দলকে এক ‘আদর্শনির্ভর প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস।
রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পার্থ চক্রবর্তী বলেন:
“এই পরিবর্তন বিজেপির র্যাঙ্ক-অ্যান্ড-ফাইলকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, একজন ব্যক্তি নয়—আদর্শ, শৃঙ্খলা ও দলই মুখ্য।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে দীর্ঘকাল ধরেই ব্যাকড্রপে দলের প্রতিষ্ঠাতা, বড় নেতা বা বর্তমান নেতার ছবি রাখার প্রচলন রয়েছে। ভারতের অন্যান্য প্রধান দল যেমন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টিতেও নেতা-কেন্দ্রিক প্রচারই মূলধারা।
সেক্ষেত্রে বিজেপির এই সিদ্ধান্ত এক ব্যতিক্রমী পথচলা হিসেবে দেখা যেতে পারে। অনেকেই বলছেন, এটি সংঘের দীর্ঘমেয়াদী আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ব্যক্তি নয় — আদর্শ ও শৃঙ্খলা মূল চালিকাশক্তি।
সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা ঝড় উঠেছে। বিজেপির একাধিক কর্মী এই পরিবর্তনকে “আদর্শগত শুদ্ধি” বলে উল্লেখ করেছেন। কিছু কর্মীর মতে, দলের প্রকৃত শক্তি দলীয় প্রতীকে ও মূলনীতিতে, কোনও ব্যক্তির মুখ নয়।
একজন লিখেছেন:
“যেখানে অন্যান্য দল একজন মুখকে নিয়ে গড়ে ওঠে, বিজেপি সেখানে আদর্শ, শৃঙ্খলা ও নীতিকে সামনে রাখে।”
তবে, বিরোধীরা বিষয়টিকে “প্রচার কৌশল” বলেও উল্লেখ করছে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “ছবি সরালেই নেতৃত্ব বদলায় না। বিজেপির রাজনীতিও এখন ব্যক্তি নির্ভর।”
আরও পড়ুন :
নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলেন ইলন মাস্ক, নাম ‘আমেরিকা পার্টি’