Samik Bhattacharya
রিপোর্ট | ক্লাউড টিভি ডিজিটাল ডেস্ক : কে হবেন বঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতি? (BJPPresidentRace JyotirmoyVsShamikVsAgnimitra)এই প্রশ্ন ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল না আসায় দলীয় স্তরে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তা আর গোপন নেই। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সভাপতির চেয়ারে নতুন নাম ঘোষণা না হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, সিদ্ধান্তে দেরির কারণ কী?
বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন জোরদার হয়েছে যে, এবার তাঁকে সরিয়ে অন্য কাউকে সভাপতি পদে বসানো হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দিল্লির নেতারা পড়েছেন বিভ্রান্তিতে। কারণ, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসেবে যাঁদের নাম উঠে আসছে—তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা গোষ্ঠী সমর্থন এবং রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।
তিন মুখ, তিন দিক
যদি বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে নতুন কাউকে আনতে হয়, তাহলে দিল্লির কাছে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর নাম সুপারিশ করেছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।কেন্দ্রীয় বিজেপির একাংশ এখনও চাইছেন ছাব্বিশের ভোটের আগে সুকান্তকে না সরাতে। এই প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেলে বাকি বিষয়টা চূড়ান্ত করে ফেলবে দিল্লি।
অন্যদিকে, আছেন শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্যসভার সাংসদ এবং দলের বহু পুরনো মুখপাত্র তিনি। ভাষায় দক্ষ, মিডিয়া হ্যান্ডলিংয়ে পারদর্শী—সবমিলিয়ে অনেকের মতে, তিনি সভাপতি পদে উপযুক্ত মুখ। আরএসএসের পছন্দ রাজ্যসভার এই সাংসদের কেন্দ্রের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে অনেকেই বলেন, মাঠপর্যায়ের সংগঠনে তাঁর দখল কিছুটা কম।রাজ্য বিজেপির পুরনোদের একটা বড় অংশই শমীকের পক্ষে সায় দিয়েছে। ফলে শমীকই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
তৃতীয় নামটি হল অগ্নিমিত্রা পাল। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মহিলা মোর্চা সভানেত্রী। তিনি দলের মধ্যে ‘মহিলা নেতৃত্ব’-এর প্রতিনিধিত্ব করেন। বিজেপি যেহেতু এখন নারী ভোট ব্যাঙ্ককেও গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই অগ্নিমিত্রার নামও সমানভাবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি তাঁর পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে।রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে রাজ্য সভাপতি পদে চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। অগ্নিমিত্রার নামও সুপারিশ হিসাবে দিল্লির নেতাদের কাছে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ও আরএসএস দ্বিধা
কেন এই বিলম্ব? মূল কারণ, দিল্লি নেতৃত্ব এবং আরএসএস-এর মধ্যে পূর্ণ সমন্বয় তৈরি হয়নি। একজনকে সভাপতি করতে গেলে অন্য পক্ষের আপত্তি থাকছে। তাছাড়া, রাজ্য সংগঠনের অভ্যন্তরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র। ফলে কেন্দ্র চায়, এমন একজনকে আনা হোক যিনি সমস্ত পক্ষকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারেন।
রামের মুখে প্রাক্তন বামনাম : সাংগঠনিক রদবদলে লালমুখী হচ্ছে গেরুয়া শিবির
মহারাষ্ট্রে যে ‘মোদিবিহীন’ ফর্মুলা কার্যকর হয়েছে, বাংলার ক্ষেত্রেও কি তেমনই ভাবছে গেরুয়া বাহিনী?
তবে প্রশ্ন উঠছে, এত দেরিতে এই পদে নতুন নাম ঘোষণা হলে তা ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলবে না তো? কারণ সভাপতি পদে নেতৃত্বহীনতা মানে জেলা ও মণ্ডল স্তরেও অনিশ্চয়তা। ইতিমধ্যে যদিও ছয়টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ঘোষণা হয়েছে, কিন্তু রাজ্য সভাপতি পদে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
তৃণমূলের খোঁচা ও বিজেপির অস্বস্তি
এই দ্বিধার সুযোগ নিতে ছাড়ছে না শাসক দল তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, “দলে সভাপতি নেই, নীতি নেই—এমন দলে বাংলার মানুষ কখনও ভরসা করতে পারে না।” যদিও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছে, খুব দ্রুতই নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হবে এবং রাজ্য সংগঠন নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নেবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য।
বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তিন সম্ভাব্য নাম ঘিরে যতই চর্চা হোক, সিদ্ধান্ত নিতে হবে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একমাত্র কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তই পারে বিজেপির সাংগঠনিক সমস্যাকে সুরাহা করতে এবং আগামী নির্বাচনে জনভিত্তি মজবুত করতে।
রাজ্যের দুই সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ও অগ্নিমিত্রা পালের নাম নতুন রাজ্য সভাপতি হিসাবে ঘোরাফেরা করলেও সংঘ-ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যই এই মুহূর্তে এগিয়ে আছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, পরবর্তী সর্বভারতীয় সভাপতি কে হচ্ছেন, তা চূড়ান্ত হয়ে গেলেই এই রাজ্যের সভাপতির নাম ঘোষণা করে দেওয়া হবে। যেহেতু সর্বভারতীয় সভাপতির নাম নিয়ে জটিলতা কাটছে না। তাই বড় বিতর্ক এড়াতেই আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা। তবে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্তই থাকবেন নাকি বদল হবে তা জুন মাসের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দিতে পারে দিল্লি।
আরও পড়ুন :
রথযাত্রার আগে দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: কড়া প্রশাসনিক নজরদারি, নিরাপত্তা
পুত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ির পথে ফেরার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পিতা