China HouthiDeal RedSea
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: রেড সির নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্থির। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা একের পর এক আন্তর্জাতিক জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এতে করে বেশিরভাগ শিপিং কোম্পানি, বিশেষ করে পশ্চিমি দেশগুলির জাহাজ, এই পথ এড়িয়ে আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপ ঘুরে ইউরোপে পৌঁছাচ্ছে—যা সময় ও খরচ দুই দিক থেকেই বেশি।
তবে সাম্প্রতিক একটি তথ্য ও নৌ-পরিবহন ডেটা বিশ্লেষণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। Lloyd’s List Intelligence–এর তথ্যমতে, গত মাসে চীনের অন্তত ১৪টি গাড়ি-বোঝাই কার ক্যারিয়ার জাহাজ নিরাপদে রেড সি ও সুয়েজ খাল পার হয়েছে (China HouthiDeal RedSea)। অন্যদিকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া বা ইউরোপীয় দেশগুলির সমজাতীয় জাহাজ এখনো ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘপথে যাচ্ছে।
এতদিন ধরে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হওয়া চীনা জাহাজগুলিকে ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছে—তারা কি হুথি বা তাদের সমর্থক ইরানের সঙ্গে কোনো গোপন বোঝাপড়া করেছে?
সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, হুথিরা মূলত পশ্চিমা স্বার্থসম্পন্ন বা ইজরায়েল-সংযুক্ত শিপিং কোম্পানিকে নিশানা করে। চীন মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করেছে। ফলে, তাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো সম্ভবত টার্গেট লিস্টে নেই।
তবে এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি দেয়নি। মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন—
“চীন লাল সাগরে বেসামরিক জাহাজে হামলার বিরোধিতা করে এবং সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রক্ষায় একসাথে কাজ করার আহ্বান জানায়।”
রেড সি ও সুয়েজ খাল দিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপে যাত্রা করলে সময় লাগে প্রায় ৩০–৩২ দিন, যেখানে আফ্রিকা ঘুরে গেলে তা হয় ৪৫–৫০ দিন। এই রুট ব্যবহারে প্রতি জাহাজে লাখ লাখ ডলার সাশ্রয় হয় এবং প্রতিটি গাড়ির পরিবহন খরচ কয়েকশ ডলার পর্যন্ত কমে যায়।
চীন বিশ্বে প্রথমবারের মতো চালু করল একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক হাসপাতাল
চীনের অটোমোবাইল শিল্প বর্তমানে ইউরোপে দ্রুত বাজার বিস্তার করছে। ২০২4 সালে ইউরোপে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির রপ্তানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তাই দ্রুত ও সাশ্রয়ী রুটে যাতায়াত তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা Reuters জানাচ্ছে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা মধ্যস্থতা হলেও রেড সির নিরাপত্তা ঝুঁকি দ্রুত কমার সম্ভাবনা নেই। হুথিদের হাতে ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল এবং নৌ-মাইন রয়েছে, যা সহজেই বড় কার্গো জাহাজে হামলা চালাতে সক্ষম।
তাছাড়া, সামুদ্রিক ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম রেড সির জন্য এখনো অত্যন্ত বেশি, যা অন্যান্য দেশের শিপিং কোম্পানিগুলিকে রুট পরিবর্তনে বাধ্য করছে।
‘অল ক্রু মুসলিম’ কৌশল
গত জুলাই মাসে Reuters–এর আরেকটি প্রতিবেদনে উঠে আসে যে কিছু জাহাজ তাদের হুলে বড় অক্ষরে “All Crew Muslim” লিখে দিচ্ছে বা রেডিওতে জানাচ্ছে—এতে হুথিদের আক্রমণ এড়ানো যায় কি না তা পরীক্ষা করতে। যদিও এই কৌশল শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না।
চীন ও হুথিদের সম্ভাব্য বোঝাপড়া শুধু বাণিজ্যিক নয়, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও আঞ্চলিক জোট কাঠামো বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। পশ্চিমা দেশের জন্য বার্তা স্পষ্ট—নিরাপদ বাণিজ্য রুট শুধু সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক প্রভাবের ওপরও নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন :
তুলনামূলক কম উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গের জন্য আরোহন ফি পুরোপুরি মকুব করল নেপাল