UkraineWar EuropeLeaders
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং একাধিক ইউরোপীয় দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক (UkraineWar EuropeLeaders) হয়েছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চলছে। ইউক্রেন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও পশ্চিমী জোট বিশেষত ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শক্তিশালী সহায়তা পেয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে।
ট্রাম্প একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি “২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন”, তবে তা কিভাবে সম্ভব তা স্পষ্ট করেননি। এর ফলে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
“বড় হুমকির মুখে ইউরোপ”—সতর্ক করলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এই বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয় আলোচনা হয়—
ইউক্রেনের জন্য মার্কিন ও ইউরোপীয় সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে কি না।
ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে আপসের পথে যাবে কি না।
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পশ্চিমা জোটের ভবিষ্যৎ কৌশল।
জেলেনস্কি বৈঠকে বলেন— “ইউক্রেনের লড়াই শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য।” তিনি সরাসরি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
ট্রাম্প বৈঠকে তাঁর পূর্বেকার অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, আমেরিকার অগ্রাধিকার হবে “নিজেদের জাতীয় স্বার্থ”। যদিও তিনি ইউক্রেনকে সম্পূর্ণভাবে হতাশ করেননি। বরং তিনি জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে একেবারে একা ফেলে দেওয়া হবে না। তবে সামরিক সহায়তার পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার দিকেই তাঁর জোর।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, জার্মানির চ্যান্সেলর, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক ইউরোপীয় নেতা। তাঁরা সবাই একবাক্যে জানান, ইউক্রেনকে দুর্বল করা যাবে না। জার্মান চ্যান্সেলর স্পষ্ট করে বলেন— “যদি ইউক্রেন হারে, তবে ইউরোপের নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই যুদ্ধ সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ওয়াশিংটনকে তার দায়িত্ব পালন করতেই হবে।
এই বৈঠক আসলে পশ্চিমী জোটের ভেতরের বিভাজনকেই সামনে নিয়ে এলো। ইউরোপ যেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে, সেখানে ট্রাম্প বরাবরের মতো “অর্থনৈতিক বোঝা কমানো ও সমঝোতার” কৌশলকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই রাশিয়ার সঙ্গে আপসের দিকে এগোন, তাহলে ইউরোপ-আমেরিকার ঐক্য ভেঙে পড়তে পারে এবং এর সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে ইউক্রেনের ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের পর দুই দিকেই চাপ তৈরি হলো। একদিকে জেলেনস্কি পশ্চিমী দেশগুলির কাছ থেকে আরও নিশ্চয়তা চাইবেন, অন্যদিকে ট্রাম্প ঘরে ফেরার পর তাঁর প্রশাসনিক টিমকে নিয়ে নতুন রূপরেখা তৈরি করতে পারেন।
সব মিলিয়ে এই বৈঠক প্রমাণ করল— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশও নির্ধারণ করছে।
আরও পড়ুন :
সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি: চাকরির বদলে টাকার মামলায় জামিন পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
ডিএমকে এপিজে আব্দুল কালামকে সমর্থন করেনি, কিন্তু বিজেপি আজ একজন তামিল নেতাকে এই সম্মান দিল