Digha Snan Yatra 2025
ক্লাউড টিভি স্পেশাল রিপোর্ট : বাংলার মাটিতে তৈরি নবনির্মিত দিঘার জগন্নাথ মন্দির। প্রথমবারের মতো সেখানে উদযাপন হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী স্নানযাত্রা (Digha Snan Yatra 2025) —জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার এক মহাপবিত্র অর্চনা পর্ব। এই শুভ ক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। নিজের বাড়ির বাগানে জন্মানো আম ও কাঁঠাল তিনি পাঠালেন মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে, যা স্নানযাত্রার দিনে ‘ভোগে’ নিবেদিত হবে।
এটা নিছকই ফল পাঠানো নয়—এই পদক্ষেপে রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনের এক নিখুঁত বার্তা।
২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন হয় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। এই মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারই এর নির্মাণে উদ্যোগী হয়। রাজ্য সরকারের টাকায় এই মন্দির তৈরি হলেও এর ধর্মীয় পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-কে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছরের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে প্রথম স্নানযাত্রা। সেই উপলক্ষেই মন্দিরে ৫৬ রকমের ভোগ নিবেদন করা হবে, যেখানে থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পাঠানো ফল।
দীঘায় মহাযজ্ঞে পূর্ণাহুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আজ সন্ধেয় ফুলের শয্যায় শোয়ানো হবে জগন্নাথ বিগ্রহ
ভারত-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে, পাঁচ বছর পর পুনরায় শুরু হচ্ছে কৈলাস মানসরোবর যাত্রা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো আম ও কাঁঠাল এসেছে তাঁর কালীঘাটের বাড়ির বাগান থেকে। বুধবার সকালেই ফলগুলি মন্দিরে পৌঁছেছে। এই ফল দিয়ে বানানো হবে মিষ্টান্ন ও অন্যান্য ভোগ, যা স্নানযাত্রার দিন দেবতাদের নিবেদন করা হবে।
ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানিয়েছেন:
“মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমাদের জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর গাছের ফল দেবেন। আমরা তা আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছি। এটা আমাদের কাছে সম্মান।”
এই অনাড়ম্বর দান মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সম্মানবোধের প্রকাশ। তিনি যেন দেখাতে চাইলেন—রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বাংলার সংস্কারচর্চা ও ভক্তিবোধ তিনি সম্মানের সঙ্গেই ধারণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে অনেকেই দেখছেন নীম কাঠ বিতর্কের পটভূমিতে একটি জবাব হিসেবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নীম কাঠ সংগ্রহ নিয়ে তৃণমূল ও ওড়িশার বিজেপি সরকার একসময় বিবাদে জড়ায়। ওড়িশার সরকার দাবি করেছিল, পুরীর রথযাত্রার জন্য বরাদ্দ কাঠ বাংলায় অবৈধভাবে কাটা হয়েছে।
তখন মুখ্যমন্ত্রী কড়া সুরে বলেন:
“আমার বাড়িতে চারটে নীমগাছ আছে। আমার সময় এত খারাপ হয়নি যে আমি কাঠ চুরি করব।”
তিনি একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, দিঘার মন্দিরে ১০০টি নীম গাছ লাগানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে কাঠের প্রয়োজন মেটানো যায় এবং গাছ কাটা নিয়ে কোনও বিতর্ক না হয়।
এই পটভূমিতে ফল পাঠানো কেবল ‘ভোগ’-এর আয়োজন নয়, বরং নিজের সরলতা ও নিষ্ঠার এক অনুপম নিদর্শন।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, স্নানযাত্রা হল জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ‘জন্মদিন’-সদৃশ দিন। এই দিন মূর্তিদের ১০৮টি কলসির জলে স্নান করানো হয়। তারপর তাঁরা কয়েকদিনের জন্য অসুস্থ হন, যা ‘অনাসার’ নামে পরিচিত। এই সময় মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে এবং ১৫ দিন পর তাঁদের আবার রথে বসিয়ে ঘোরানো হয়—এই সময়ের নাম রথযাত্রা।
দিঘার মন্দিরে এবারই প্রথম এই নিয়মমাফিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে, যেখানে ভোগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো ফল মিশে যাচ্ছে ঈশ্বরের প্রসাদে।
আরও পড়ুন :
ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার: ১০,০০০ কোটির দায়ভার ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া