Trump IndiaPakistan Ceasefire
শান্তনু কর্মকার : বিতর্ক দানা বাঁধতে বাঁধতেও শেষমেশ বাঁধল না, পুড়তে থাকা কয়লার ওপর কার্যত জল ঢেলে দিলেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাতারে মার্কিন বায়ুসেনাঘাঁটিতে বক্তব্য রাখার সময়ই বললেন, ‘আমি সত্যিই নিশ্চিত নই যে, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি-সমঝোতা করতে পেরেছি কি-না’ (Trump IndiaPakistan Ceasefire)। অর্থাৎ, গত রবিবার যে দাবি করে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প, আজ একেবারে ‘U Turn’ নিয়ে ঠিক তার উলটো পথে হাঁটলেন তিনি।
নভেম্বরে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারের স্লোগানই ছিল, ‘Make America Great Again’। কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেভাবেই হোক রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইজরায়েল-হামাস সমস্যার সমাধান করবেন তিনি। ট্রাম্প ভোটে জেতার পর মাঝে ইজরায়েল-হামাসের -মধ্যে সত্যিই সংঘর্ষবিরতি ঘোষনা হয়েছিল, শুরু হয়েছিল দুই পক্ষের বন্দী-বিনিময়ও। আমেরিকানরা ধীরে ধীরে বিশ্বাস করছিল, পারলে ট্রাম্পই পারবেন তাঁদের দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। ফুলেফেঁপে উঠবে মানুষের পকেট। এহেন ‘ক্যারিসমা’ দেখানোর পর ট্রাম্প যে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নাক গলাবেন, তা জানাই ছিল।
যুদ্ধবিরতির পরও আশঙ্কায় ভুগছেন কাশ্মীরবাসী, বাংকারে রসদ রেখে ঘরে ফেরা
৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে ইউক্রেন, রাশিয়া কি সম্মত হবে?
তাল কাটল ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে গিয়ে। ট্রাম্পের একের পর এক বক্তব্যকে মিথ্যা বলে দাগিয়ে দিতে থাকল নয়াদিল্লি, বুঝিয়ে দিল ‘ভারত নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে সক্ষম, ব্যবসায়িক স্বার্থে সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি’। মাত্র ছ’মাস আগে যে সংবাদমাধ্যম ট্রাম্পের জয়ে ভারতের জন্য নতুন ভোর দেখতে পাচ্ছিল, তারাই এখন বুঝে উঠতে পারছে না, ‘হঠাৎ করে ট্রাম্পের হলটা কী’? বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ অবশ্য পার্থক্যটা ধরিয়ে দিচ্ছেন চোখে আঙুল দিয়ে। তাঁদের মতে, দ্বিতীয়বারের জন্য হোয়াইট হাউসে এসে ট্রাম্প শুধু নিজের দেশের কথা বোঝেন। সেই কারনেই শুরু থেকে বিভিন্ন দেশের ওপর এত শুল্ক চাপানো, কানাডা-গ্রিনল্যান্ডকে চাবকাতে চাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আমেরিকানদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে যদি পাঁচটা বছর বাদে ইন্দো-আমেরিকানদের নেকনজরে না-ও থাকেন, তাতে যেন কিছুই যায় আসে না ওঁর।
ব্যবসা নিয়ে এই মাত্রায় সিরিয়াস ট্রাম্প চেয়েছিলেন যদি কোনওভাবে নয়াদিল্লিকে টাইট দেওয়া যায়। সেইজন্যই অ্যাপেলের সিইও টিম কুককে বলেছিলেন, তিনি চান না অ্যাপল ভারতে কারখানা খুলুক। ভ্রু কুঁচকে বলেছিলেন, ‘ভারত নিজেদেরটা নিজেরাই বুঝে নিতে পারে’। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রভাব পড়েনি আইফোন নির্মাতা সংস্থাটির ওপর। জানা গিয়েছে, আগের পরিকল্পনা মতোই ভারতে বিনিয়োগ করবে অ্যাপল, কারখানা খোলার জন্য ভারতকে বেশ গুরুত্বই দিচ্ছে সংস্থাটি।
ট্রাম্প দুঁদে রাষ্ট্রনায়ক, তাঁর জন্য জেদি-একগুঁয়ে-উগ্র… এরকম আরও বিশেষন ব্যবহার করা যায়। প্রথমে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে সুরবদল, পরে ভারতে কারখানা খোলার ব্যপারে উপদেশ দিয়েও মুখ টকে যাওয়া… এখনও অবধি স্কোরলাইন ভারতের পক্ষে ২-০।
আরও পড়ুন :
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নতুন বিধিনিষেধ: পোশাকে নগ্নতা, অতিরিক্ত দৈর্ঘ্য ও বড় ব্যাগ নিষিদ্ধ