SIR in West Bengal
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে এখনও Special Intensive Revision (SIR) ঘোষণা হয়নি, কিন্তু তার আগেই ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন Booth Level Officer (BLO)-রা। তাঁদের নিয়ে এবার একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে কমিশন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে — SIR শুরুর আগে থেকেই কমিশন চাইছে পরিস্থিতি এবং কর্মী-তথ্যভান্ডার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের মাধ্যমে একটি আধিকারিক নির্দেশিকা (circular) পাঠানো হবে। এতে স্পষ্ট বলা আছে —
যখনই SIR শুরু হবে, তখন থেকে BLOদের কোনওভাবে বদলি করা যাবে না। এমনকি তাঁদের অন্য কোনও প্রশাসনিক বা শিক্ষাগত কাজে যুক্ত করাও নিষিদ্ধ করা হবে। অর্থাৎ, SIR কার্যক্রম চলাকালে BLO এবং সংযুক্ত শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন ও যাচাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
রাজ্যে SIR হলে কোন বৈধ ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে না: সিইও
“বঙ্গের ভোটার লিস্টে ১ কোটিরও বেশি ভুয়ো ভোটার”, গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
ECI-এর এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণ, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় কোনও রাজনৈতিক প্রভাব, পক্ষপাত বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ যাতে না ঘটে। BLOরা সাধারণত স্থানীয় শিক্ষক বা সরকারি কর্মচারী, যাঁদের এলাকায় ভোটার তালিকা যাচাইয়ের দায়িত্ব থাকে। তাই তাঁদের বদলিকে কেন্দ্র করে রাজ্যে প্রায়শই বিতর্ক তৈরি হয়। এবার কমিশন সেই সম্ভাবনাও আগেভাগে রুখে দিতে চায়।
ECI স্পষ্ট জানিয়েছে, SIR শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের উপর কমিশনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবে। অর্থাৎ, তখন সমস্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, BLO নিয়োগ থেকে শুরু করে ফিল্ড ভেরিফিকেশন পর্যন্ত — সবই কমিশনের নির্দেশে হবে। এর ফলে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কার্যত সীমিত থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিগত কয়েক মাস ধরেই রাজ্যে SIR ঘোষণাকে কেন্দ্র করে টানাপোড়েন চলছে। বিরোধী দলগুলির দাবি, রাজ্য সরকার ভোটার তালিকায় একাধিক অনিয়ম ঢাকতে চাইছে, আবার শাসক দল অভিযোগ করছে যে কমিশন বিরোধীদের চাপে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের আগাম পদক্ষেপ একপ্রকার “চোখের উপর নজর” বলেই ব্যাখ্যা করছেন প্রশাসনিক মহল।
SIR বা Special Intensive Revision মানে হচ্ছে — ভোটার তালিকার বিশেষ পুনর্মূল্যায়ন, যেখানে পুরনো নাম বাদ দেওয়া এবং নতুন ভোটার যুক্ত করার কাজ হয়। সাধারণ ভোটার তালিকা সংশোধনের তুলনায় এটি অনেক বেশি বিস্তারিত ও সময়সাপেক্ষ।
বিরোধীদের দাবি, যদি রাজ্যে এই SIR কার্যকর হয়, তাহলে প্রায় এক কোটি ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু এবং তফসিলি জনগোষ্ঠীর নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, BLOদের তথ্যের ওপর নির্ভর করে SIR চালানো হলে কোনও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য দিলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন।
অন্যদিকে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে — SIR প্রক্রিয়া ন্যায্যভাবে হলে তাদের কোনও আপত্তি নেই, তবে কমিশন যেন “রাজনৈতিক চাপে” কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন, “SIR নিয়ে ভয় দেখিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, SIR ঘোষণা হলে প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক, পৌরসভা ও কর্পোরেশন এলাকায় BLOদের মাধ্যমে ডোর-টু-ডোর যাচাই শুরু হবে। BLOদের হাতে থাকবে ফর্ম ৬ (নতুন ভোটার সংযোজন), ফর্ম ৭ (নাম বাদ দেওয়ার আবেদন), ও ফর্ম ৮ (তথ্য সংশোধন)।
এই প্রক্রিয়ায় আধার-ভিত্তিক যাচাইও হবে বলে জানা গেছে। ECI বলেছে, “ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করতে আধার লিঙ্ক বাধ্যতামূলক নয়, তবে উৎসাহিত করা হবে।”
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬ সালে। তাই ২০২৫ সালের শেষের দিকে SIR ঘোষণা হলে রাজনৈতিকভাবে রাজ্যে এক নতুন উত্তেজনার অধ্যায় শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুন :
সুশান্ত সিং রাজপুতের বোন দিভ্যা গৌতম হচ্ছেন সিপিআই(এমএল) প্রার্থী, বিহারের দিঘা আসনে নাম ঘোষণা