Breaking News

Gaza JournalismUnderFire

ক্যামেরা বিক্রি করে সন্তানদের জন্য রুটি জোগাচ্ছেন গাজার সাংবাদিক

গাজার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বশির আবু আলশায়ের সন্তানদের অনাহার মেটাতে নিজের একমাত্র জীবিকার উপকরণ—ক্যামেরা বিক্রি করেছেন। চলমান ইজরায়েলি অবরোধ ও সংঘাতে সাংবাদিকদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে তারা বেঁচে থাকার জন্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতিকে সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি বলে সতর্ক করেছে।

Gaza Journalism Under Fire: A Struggle for Truth %%page%% %%sep%% %%sitename%%

Gaza JournalismUnderFire

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকার ফলে মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। খাদ্য, জল ও চিকিৎসার সংকটে লক্ষাধিক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এর মধ্যেই হৃদয়বিদারক এক ঘটনা সামনে এসেছে—ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বশির আবু আলশায়ের নিজের জীবিকার একমাত্র উপকরণ, ক্যামেরা বিক্রি (Gaza JournalismUnderFire) করে সন্তানদের জন্য রুটি সংগ্রহ করেছেন।

৪২ বছর বয়সী বশির আবু আলশায়ের দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের খবর, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িঘর, নিহত শিশুদের করুণ অবস্থা—সবই তার ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছে। কিন্তু চলমান সংঘাত ও অবরোধের কারণে গাজায় সাংবাদিকদের আয় প্রায় শূন্যের কোঠায়। কাজের সুযোগ কমে গেছে, আর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পৌঁছাতে পারছে না যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায়।

বশির বলেন, “আমার পোস্টটি কোনো প্রচারণা ছিল না; এটি ছিল একজন ডুবে যাওয়া মানুষের খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা। এক টুকরো রুটি এখন স্বপ্নের মতো। আমি আমার সন্তানদের অনাহারে থাকতে দেখেছি। আমার বাড়িতে কোনো খাবার অবশিষ্ট ছিল না। আমার ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।”

গাজার বহু সাংবাদিক বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। অনেকে নিহত, অনেকে আহত, এবং বেশিরভাগই বেকার হয়ে পড়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করেও অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটছে না, কারণ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো অনেক সময় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের পারিশ্রমিক দিতে বিলম্ব করছে বা চুক্তি বাতিল করছে।

গাজায় প্রতি ৪০ মিনিটে একটি শিশু মারা যাচ্ছে!

ইজরায়েলি আগ্রাসনে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে: স্কুলছুট প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক সাংবাদিক ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করেছেন, যেন অন্তত পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার ও পানীয় জোগাড় করা যায়। কিছু সাংবাদিক সংবাদকর্ম বন্ধ করে অন্য কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছেন, তবে গাজার অবরুদ্ধ অবস্থায় বিকল্প আয়ের উৎসও খুবই সীমিত।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে যে, গাজায় সাংবাদিকদের উপর হামলা ও অর্থনৈতিক চাপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করছে। Reporters Without Borders (RSF) জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বহু সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আর যারা বেঁচে আছেন, তারা জীবন ও জীবিকার সংকটে ভুগছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শুধু নিরাপত্তা নয়, সাংবাদিকদের জন্য জরুরি খাদ্য ও অর্থ সহায়তারও আহ্বান জানাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও চলমান সংঘাতের কারণে সেই সহায়তা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

বশিরের গল্প শুধু একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত দুঃখকথা নয়, বরং গোটা গাজার সাংবাদিক সমাজের প্রতিচ্ছবি। তার ক্যামেরাটি ছিল তার আয়ের উৎস, গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার হাতিয়ার এবং বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। সেটি বিক্রি করে দেওয়া মানে ছিল শেষ অবলম্বনও হারানো।

তিনি বলেন, “আমি জানি না আগামীকাল কী করব। আমার সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু সাংবাদিকতা আমার পরিচয়, আমার ভালোবাসা—এটি হারিয়ে যেতে বসেছে।”

বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তার আহ্বান নতুন করে জোরদার হয়েছে এই ঘটনার পর। গাজায় সংঘাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা যে চলতেই থাকবে—তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন :

চীনের অটোমোবাইল কার্গো কি হুথিদের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে রেড সি পার করছে?

তুলনামূলক কম উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গের জন্য আরোহন ফি পুরোপুরি মকুব করল নেপাল

ad

আরও পড়ুন: