India Russian oil tariffs 2025
ক্লাউড টিভি ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র–ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও গভীর হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর বিতর্কিত মন্তব্যে। সম্প্রতি ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করছে (India Russian oil tariffs 2025)। এই লাভের বড় অংশ নাকি যাচ্ছে ভারতের উচ্চবিত্ত বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে, যাদের তিনি “brahmins profiteering” বলে আখ্যা দেন।
নাভারোর মন্তব্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিকভাবে সংবেদনশীল। তিনি বলেন, “ভারতে ব্রাহ্মণরা সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করে বিপুল মুনাফা করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এটা বন্ধ করতে হবে।” মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগেই ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এবার নাভারো সেই সিদ্ধান্তকে আরও নৈতিক ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ভারতকে শাস্তি, চীনকে ছাড়? রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে মার্কো রুবিওর ব্যাখ্যা
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমী দেশগুলো রুশ তেল নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ভারত সুযোগ বুঝে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনতে শুরু করে। সরকারি যুক্তি হলো, ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠীর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে এটি জরুরি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারতের এই পদক্ষেপ আসলে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থ জোগাচ্ছে।
নাভারো শুধু শুল্ক আরোপের পক্ষে যুক্তি দেননি, বরং ভারতকে সরাসরি “রুশ তেলের লন্ড্রি” বলেও অভিহিত করেছেন। তার মতে, ভারত যে তেল কিনছে, তা প্রক্রিয়াজাত হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং মুনাফা যাচ্ছে অল্প কয়েকজন প্রভাবশালী শ্রেণির কাছে। এ কারণেই ভারতীয় পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করেন তিনি।
এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ সাত বছর পর প্রথমবারের মতো চীন সফর করছেন। তিনি সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এবং সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের এই ভূরাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও অস্বস্তিতে ফেলছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটি কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নয়। ভারত সরকার স্পষ্ট করেছে, তারা দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে রাখছে। এছাড়া ভারত মনে করে, মার্কিন শুল্ক আরোপ অন্যায্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে নাভারোর ব্রাহ্মণ প্রসঙ্গ। ভারতের অভ্যন্তরীণ জাতপাত ব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকের এমন মন্তব্যকে অনেকেই “কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ” হিসেবে দেখছেন। কারণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতীয় সমাজের অভ্যন্তরীণ বিভাজন টেনে আনা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হতে পারে।
২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ২৫% শুল্ক আরোপ করে। পরে তা দ্বিগুণ করে মোট ৫০% করা হয়। এতে ভারতীয় পণ্য যেমন টেক্সটাইল, স্টিল, ফার্মাসিউটিক্যালস, এবং আইটি খাতের রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দুই গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্কেও ভাঙন দেখা দিতে পারে।
নাভারোর সাম্প্রতিক মন্তব্য শুধু বাণিজ্য বিরোধকে আরও উস্কে দেয়নি, বরং ভারত–যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির ভেতরে সামাজিক উপাদান ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকট মোকাবেলায় ভারত কোন পথে এগোবে—যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মেনে চলবে, নাকি রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করবে?
আরও পড়ুন :
আলতামাস কবীরের পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ফের বাঙালি প্রধান বিচারপতি, ২০৩১ সালে বসছেন জয়মাল্য