IranRadar
তেহরান | ২৫ মে ২০২৫ : বহু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রযুক্তিগত বাধা অতিক্রম করে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ রাডার (IranRadar) উন্মোচন করল ইরান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ আবাদান বিমানবন্দরে ‘এমএসএসআর-মোড এস’ নামের এই মনোপালস সেকেন্ডারি সার্ভেইলেন্স রাডার সিস্টেমটি বসানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই রাডার সিস্টেম উদ্বোধন করেন ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে। সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ এবং প্রেস টিভি জানিয়েছে, এই উদ্যোগ ইরানের আত্মনির্ভর প্রযুক্তির আরেকটি মাইলফলক।
এই রাডার একটি মনোপালস সেকেন্ডারি সার্ভেইলেন্স রাডার (MSSR) — যা বিমানের অবস্থান ও পরিচয় আরও নিখুঁতভাবে নির্ধারণে সক্ষম। এই সিস্টেমে ব্যবহৃত ‘মোড এস’ প্রযুক্তি আধুনিকতম বিমান ট্র্যাকিং মেথড, যা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত।
রাডারটি (IranRadar) একইসঙ্গে স্বয়ংক্রিয় বিমানের শনাক্তকরণ, উচ্চতা নির্ধারণ, গতিপথ বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বস্তুর উপর নজরদারি করতে পারে। এর আওতা ৪৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ, অর্থাৎ আবাদান থেকে শুরু করে ইরাক সীমান্ত ও পারস্য উপসাগরের একটি বড় অংশ পর্যন্ত এটি কার্যকরভাবে বিমান শনাক্ত করতে পারবে।
ইরানের প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পকে কঠোর বার্তা: পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে না
চীন বিশ্বে প্রথমবারের মতো চালু করল একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক হাসপাতাল
এই রাডার সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত। ইসফাহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও ইঞ্জিনিয়ারদের যৌথ প্রচেষ্টায় রাডারটির ডিজাইন, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে।
মোহাম্মদ আমিরানি, ইরান এয়ারপোর্টস অ্যান্ড এয়ার ন্যাভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জানান:
“এই রাডার আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করে তুলবে। আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এটি তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি স্বনির্ভরতার প্রমাণ মিলেছে।”
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি আমদানিতে বাধার সম্মুখীন। বিশেষত বিমান চলাচল ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপকভাবে ইরানকে প্রভাবিত করেছে।
এমএসএসআর-মোড এস রাডারটির নিজস্বভাবে নির্মাণ ইরানের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা: তারা বিকল্প পথ খুঁজে নিতে সক্ষম এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিজেরাই তৈরি করতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, রাডারটি শুধু বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং ইরানের সামরিক নজরদারি ব্যবস্থারও অংশ হিসেবে কাজ করবে।
এই রাডার উন্মোচনের খবর বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন মানে শুধুই উন্নত প্রযুক্তি নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে এটি একটি বড় অগ্রগতি।
এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে আকাশসীমা ব্যবস্থাপনায় ইরানের আধিপত্য আরও বাড়বে বলেও অনেকে মনে করছেন। পারস্য উপসাগর বরাবর মার্কিন ও সৌদি যুদ্ধবিমান চলাচল, আন্তর্জাতিক উড়ান রুটের কৌশলগত অবস্থান—সবকিছু মিলিয়ে এই রাডারের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ইরানের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে আরও কয়েকটি বিমানবন্দরে নতুন রাডার সিস্টেম বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ইরানের সব প্রধান বিমানবন্দরে নিজস্ব রাডার প্রযুক্তির মোতায়েন লক্ষ্য।
এছাড়াও, এই সিস্টেমের আপডেট সংস্করণ তৈরির জন্য ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন :
ক্যান্সার আক্রান্ত বাইডেন প্রথমবার জনসমক্ষে: বললেন, “ভালো আছি”, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসা নিয়ে
বাংলাদেশ থেকে বিদেশি স্ত্রী কেনার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্ক করল ঢাকার চীনা দূতাবাস