শারীরিক কারণে পদত্যাগ করলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় , বর্ষা অধিবেশনের মাঝেই বড় রাজনৈতিক মোড়

JagdeepDhankhar Resigns

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় আচমকাই নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। আজ, সোমবার, মনসুন অধিবেশনের প্রথম দিনেই তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু-র হাতে তুলে (JagdeepDhankhar Resigns) দেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ। ভারতের সংবিধানের ৬৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে এই পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে।

সোমবার সকালেই উপরাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ধনখড় “unforeseen medical conditions”-এর কারণে কাজ চালিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় এবং চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি পদত্যাগ করছেন। ধনখড় তাঁর পদত্যাগপত্রে রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লেখেন, “এই দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনের সবচেয়ে সম্মানজনক পর্বগুলোর একটি।”

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইলন মাস্কের পদত্যাগ, বিতর্কের অবসান

লোকসভায় শূন্য, বিধানসভায় শূন্যের পরে এবারে রাজ্যসভায়ও শূন্য হবে সিপিএম!

তিনি তাঁর চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, এবং সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ভূমিকা এবং পার্লামেন্টে বিভিন্ন আইন পাসের সময় তাঁর “নিরপেক্ষ অবস্থান” অনেকের কাছে প্রশংসিত ছিল।

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৭(ক) অনুযায়ী, উপরাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতির নিকট লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। এবার সেই রাস্তাই বেছে নিয়েছেন ধনখড়। এই ঘটনার পরবর্তী ধাপে, নির্বাচন কমিশন খুব শীঘ্রই নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করবে।

উল্লেখ্য, উপরাষ্ট্রপতির মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর। কিন্তু ধনখড় নিজের তিন বছরের মাথাতেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন। ২০২২ সালের আগস্টে তিনি এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবং এবার তাঁর সময়কাল শেষ হতো ২০২৭ সালের আগস্টে।

ধনখড়ের পদত্যাগ রাজ্যসভার কার্যক্রমে বড়সড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হওয়ায়, তাঁর পদত্যাগে ওই পদটিও শূন্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ডেপুটি চেয়ারম্যান দায়িত্ব সামলালেও, শীঘ্রই নতুন নির্বাচন না হলে রাজ্যসভার কার্যক্রম প্রভাবিত হতে পারে।

এছাড়া, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই পদত্যাগ কিছুটা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, মনসুন অধিবেশনের প্রাক্কালে এই পদত্যাগ শুধু সময়োপযোগী নয়, বরং অনেক রাজনৈতিক পর্যালোচকের মতে “strikingly timed”। তবে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকার সূত্রে জানানো হয়েছে, এটি পুরোপুরি “স্বাস্থ্যজনিত” কারণেই ঘটেছে।

ধনখড়ের রাজনৈতিক জীবন এক ঝলকে

• জন্ম: ১৮ মে, ১৯৫১ | রাজস্থান

• আইনজীবী পেশায় শুরু, পরে রাজনীতিতে প্রবেশ

• ১৯৮৯-৯১: লোকসভা সাংসদ

• ১৯৯০-৯১: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (Parliamentary Affairs)

• ১৯৯৩-৯৮: বিধায়ক, রাজস্থান বিধানসভা

• ২০১৯-২০২২: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বহুবার খবরের শিরোনামে এসেছে

• ২০২২: উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৭৪.৩৭% ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন — এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় জয়

রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ লিখেছেন:

“Jagdeep Ji’s contributions to public life and parliamentary values will be remembered forever. I respect his decision and wish him good health.”

বিরোধী শিবির থেকেও ধনখড়ের পদত্যাগে “অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক” বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ শুধুমাত্র একটি সাংবিধানিক পদে পরিবর্তন নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মোড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের রাজনীতিতে এক গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। এখন নজর আগামী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অঙ্কের দিকে।

আরও পড়ুন :

প্রয়াত প্রাক্তন কেরল মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম আইকন ভি এস অচ্যুতানন্দন, বয়স হয়েছিল ১০০ বছর

প্রয়াত নকশাল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আজিজুল হক