Mokama Election Murder AnantSingh
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : নির্বাচনের প্রাক্বালে বিহারের রাজনীতি আবারও কেঁপে উঠল হিংসায়। পাটনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র মোকামায় নির্বাচনী প্রচারকালে খুন হলেন জন সুরাজ ক্যাম্পের সক্রিয় কর্মী দুলার চন্দ যাদব। এ ঘটনায় প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেফতার হলেন জেডিইউ প্রার্থী ও প্রভাবশালী প্রাক্তন বিধায়ক অনন্ত সিংহ।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার রাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জন সুরাজের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রচার শেষে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ফেরার পথে দুলার চন্দের ওপর হামলা হয়। প্রথমে কথাকাটাকাটি শুরু হলেও পরিস্থিতি দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। এরপর ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। শেষপর্যন্ত গুরুতর আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুলার চন্দ যাদব।
তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রশাসন দ্রুত অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। যদিও পরিস্থিতি কিছু সময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল, তাহলেও নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
এদিকে, তদন্ত শুরু হওয়ার পর পরই উঠে আসে অনন্ত সিংহসহ কয়েকজনের নাম। তিনি বিহারের রাজনীতিতে বিতর্কিত চরিত্র। কারণ অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও হিংসার অভিযোগ উঠেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নিজেকে সমাজকল্যাণমুখী নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবুও পুরনো ইমেজ তাঁকে ঘিরে রেখেছে।
তবে অনন্ত সিংহ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন—
“এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমাকে নির্বাচন থেকে সরাতে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।”
তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে তাদের হাতে বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ এসেছে। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় সাক্ষীদের জবানবন্দিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাই আদালতের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রসঙ্গত, আসন্ন নির্বাচনে মোকামা কেন্দ্রকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছিল। ভোটের আগে এমন হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ দুলার চন্দ যাদব স্থানীয়ভাবে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন এবং ভোটের মাঠে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা জন সুরাজ শিবিরকে শক্তিশালী করছিল।
রাজ্যে SIR হলে কোন বৈধ ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে না: সিইও
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এ ঘটনা কি কেবল ব্যক্তিগত বৈরিতা, না কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মোকামায় ক্ষমতার লড়াই বহু বছর ধরেই তীব্র। বিশেষ করে বর্ণভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও পুরনো অপরাধী নেটওয়ার্ক এখানে গভীরভাবে সক্রিয়। ফলে নির্বাচনের সময় উত্তেজনা তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
এদিকে, দুলার চন্দের সমর্থকদের দাবি—
“তাঁকে লক্ষ্য করেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।”
অপরদিকে, প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত দ্রুত চলছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। ভোটের আগে এমন ঘটনা নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাই নির্বাচন কমিশন বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে এবং এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে দোষারোপ করছে। জন সুরাজ শিবির দাবি করেছে—
“এটি গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।”
জেডিইউ পাল্টা বলছে—
“বিষয়টি আদালতে, তাই রাজনীতি না করাই শ্রেয়।”
তবে জনমানসে প্রশ্ন একই—মোকামার রাজনীতি আবার কি রক্তাক্ত পথে?
আরও পড়ুন :
“ফিরিয়ে আনবে ‘জঙ্গল রাজ’?” : শাহাবুদ্দিনের ছেলেকে RJD বিধানভার টিকিট দেওয়ায় দাবী BJP র
রেলওয়ে প্লাটফর্মে এই কাজ করলে এবার থেকে হবে মোটা টাকা জরিমানা