NDA Bihar Manifesto
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট তাদের নির্বাচনী ঘোষণা পত্র প্রকাশ করল। পাটনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা করেন NDA নেতারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি সভাপতি এবং রাজ্যের জোট নেতৃত্ব।
এবার মূল ফোকাস রাখা হয়েছে চাকরি, মহিলা ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো, কৃষি উন্নয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে। যদিও বিরোধীরা বলছে, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কঠিন এবং অবাস্তব।
প্রথমত, এবারের সবচেয়ে বড় ঘোষণা হলো এক কোটি সরকারি চাকরি সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে বিভিন্ন বিভাগে বিধিসম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নিয়োগ হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এত বিপুল সরকারি চাকরি সৃষ্টি করতে গেলে রাজ্যকে বড়সড় প্রশাসনিক ও বাজেট সংস্কার করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটানো হবে বলে দাবি জোটের।
এছাড়া, মহিলা ক্ষমতায়নকে বড় গুরুত্ব দিয়েছে এনডিএ। মেনিফেস্টোতে ঘোষণা করা হয়েছে এক কোটি ‘লক্ষপতি দিদি’ তৈরির পরিকল্পনা। এর মানে, স্বনির্ভর দলভুক্ত নারী সদস্যরা বছরে অন্তত এক লাখ টাকা আয় করবেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের মাধ্যমে চালু ‘লক্ষপতি দিদি’ প্রকল্পকে আরও বিস্তৃত করে বিহারে বিশেষ বাস্তবায়ন করা হবে। যদিও বিরোধীদের মতে, গত কর্মসূচির হিসাব এখনো স্পষ্ট নয়।
পরবর্তীভাবে, রাজ্যে শুরু করা হবে “মিশন ক্রোড়পতি”, যার উদ্দেশ্য মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের ব্যবসা সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার সংযোগ, ব্যাংক লোন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে দেশের নারী অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলবে বলে দাবি।
তবে কেবল নারী নয়, যুবসমাজের জন্যেও রয়েছে বড় পরিকল্পনা। প্রতিটি জেলায় মেগা স্কিল সেন্টার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা আধুনিক প্রযুক্তি, ডিজিটাল ব্যাবসা, সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিল্পখাতে প্রশিক্ষণ পাবেন। এছাড়া কর্মবাজার নিয়ে রাজ্যজুড়ে স্কিল সেন্সাস করা হবে। ফলে, কোন খাতে কত মানুষের প্রয়োজন তা নির্ধারণ সহজ হবে।
অন্যদিকে, অবকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া হয়। নতুন এক্সপ্রেসওয়ে, শহর উন্নয়ন, আধুনিক রেল প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। রাজ্যে শিল্পাঞ্চল ও লজিস্টিক হাব গঠনের পরিকল্পনাও সামনে আনা হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে এবং আরও চাকরি তৈরি হবে বলে মনে করছে শাসকদল।
কৃষকদের জন্য রয়েছে নয়া প্রতিশ্রুতি। ঘোষণা অনুযায়ী, নূন্যতম সহায়ক মূল্য (MSP) গ্যারান্টি শক্তিশালী করা হবে, পাশাপাশি আধুনিক কৃষি বাজার ও ‘ফুড প্রসেসিং হাব’ তৈরি হবে। যদিও বিরোধীরা বলছে, কৃষি সংস্কার নিয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে নতুন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইন্সটিটিউট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং জেলা পর্যায়ে স্পেশালাইজড হাসপাতাল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা বিস্তৃত করা হবে বলে দাবি জোটের।
এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা পেনশন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ ও আবাসন প্রকল্প উন্নয়ন, পরিষ্কার পানীয় জল ও গ্রামীণ বিদ্যুৎ প্রসারের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
অবিবাহিত গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নতুন ঘোষণা, প্রতি মাসে মিলবে ১,০০০ টাকা ভাতা
মুম্বইয়ে পোয়াইয়ে ১৭ শিশু পণবন্দি: পুলিশের অভিযানে নিহত রোহিত আর্য, নিরাপদে উদ্ধার সবাই
তবে, এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, গত নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বড় অংশই বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এবারও মানুষকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। তবে এনডিএ নেতাদের দাবি, পূর্ব প্রতিশ্রুতি বেশিরভাগটাই পূরণ করা হয়েছে এবং নতুন সংকল্পগুলো বাস্তবায়িত করে বিহারকে উন্নয়নের নতুন পথে তোলা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিশাল চাকরি ঘোষণা ও নারী ক্ষমতায়নের বার্তা ভোটারদের মন ছুঁতে পারে। বিশেষত তরুণ ও প্রান্তিক শ্রেণির ভোট ক্ষোভ প্রশমিত করতে এই কৌশল কার্যকর হতে পারে। তবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কাঠামোই ঠিক করবে এই পরিকল্পনাগুলোর ভবিষ্যৎ।
সব মিলিয়ে, বিহারে এনডিএ ওয়েলফেয়ার-ড্রাইভেন এবং ডেভেলপমেন্ট-সেন্ট্রিক নির্বাচন বার্তা দিচ্ছে। এখন দেখা যাক ভোটাররা এই প্রতিশ্রুতিকে কতটা বিশ্বাস করেন।
আরও পড়ুন :
ইউরোপে নতুন নিরাপত্তা সংকট : রাশিয়া ব্যবহার করল INF ভঙ্গের অভিযোগে থাকা 9M729 মিসাইল