AzizulHaque
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, বামপন্থী চিন্তাবিদ এবং সিপিআই (এম–এল)-এর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক (AzizulHaque) আর নেই। সোমবার দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে কলকাতার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছরের বেশি। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নকশালবাড়ির লাল ইতিহাসে তাঁর স্থান
আজিজুল হকের নাম উচ্চারিত হয় নকশালবাড়ি আন্দোলনের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে। ১৯৬৭ সালের সশস্ত্র কৃষক আন্দোলনের পথ ধরে যে বামপন্থী বিদ্রোহ বাংলার গ্রামীণ সমাজে বিস্তার লাভ করেছিল, তার অন্যতম সংগঠক ছিলেন আজিজুল হক। চারু মজুমদারের মৃত্যুর পরে যখন সিপিআই (এম–এল) ছিন্নভিন্ন অবস্থায়, তখন দলের দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়ে তিনিই সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব নেন।
বিজেপির পরিবর্তিত পার্টি লাইনে যেন বেমানান খোদ শুভেন্দুর বক্তব্য, সমস্যাটা কোথায়?
১৮ বছরের কারাবাস, আত্মজীবনী হয়ে উঠেছিল নথি
১৯৭০ সালে আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর জেলবন্দি ছিলেন তিনি। সেই কারাবাসের অভিজ্ঞতা, নির্যাতনের বিবরণ, বিচারবহির্ভূত পরিস্থিতি—সবকিছু তিনি তুলে ধরেন তাঁর বহুল আলোচিত বই ‘কারাগারের ১৮ বছর’-এ। এই বই শুধু আত্মজীবনী নয়, হয়ে ওঠে একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা নকশাল আন্দোলনের অন্তর থেকে দেখা এক প্রতিবেদন।
আজিজুল হকের চিন্তাভাবনার মধ্যে ছিল নিরন্তর আত্মবিশ্লেষণ। ১৯৯০-এর দশক থেকে তিনি সরাসরি দলীয় রাজনীতি থেকে কিছুটা সরে এসে বাম চিন্তায় সমাজ সংস্কার, শ্রেণিচ্যুতি ও মুক্তির দর্শনের ওপর গুরুত্ব দিতে থাকেন। তাঁর লেখালেখি, বক্তৃতা ও প্রকাশিত প্রবন্ধ বিভিন্ন প্রগতিশীল মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রবীণ বামপন্থী নেতার প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শোকবার্তা দিয়েছেন। তিনি লেখেন—
“আজিজুল হক ছিলেন এক সংগ্রামী, লড়াকু নেতা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা।”
প্রবীণ রাজনীতিক আজিজুল হক’এর প্রয়াণে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।
আজিজুল হক একজন লড়াকু, সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো মাথা নত করেননি।
তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহযোগীদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 21, 2025
আজিজুল হকের মৃত্যু নিছক একজন নেতার মৃত্যুই নয়। এটি এক ঐতিহাসিক যুগের অবসান। বাংলার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে যে লাল আগুন এক সময় দাউদাউ করে জ্বলছিল, তারই এক আশ্চর্য জ্যোতিষ্ক ছিলেন আজিজুল হক।
আরও পড়ুন :
শুভমান গিল: ভারতের নতুন ব্র্যান্ড সুপারস্টার
চলে গেলেন সৌদির ‘ঘুমন্ত প্রিন্স’, ২০ বছরের কোমা শেষে অবসান এক বেদনাময় অধ্যায়ের