USChinaTensions
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় দ্বিতীয় চীন‑মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে দৃশ্যটা ছিল যথেষ্ট নাটকীয়। যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে ইরান‑ইসরাইল যুদ্ধের সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ। স্বাক্ষরিত ঘোষণা‑পত্রে বলা হয়, “সুয়েজ থেকে পারস্য উপসাগর—সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় স্থিতিশীলতা এখন অনির্বাচনীয় প্রাধান্য”। এ‑সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শি সাফ জানান, ইরানের ভূখণ্ডে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং তা অবশ্যম্ভাবীভাবে বৃহত্তর সংঘাতে (USChinaTensions) রূপ নিতে পারে।
কয়েক ঘণ্টা পরেই নিজের ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে শি দেন বহুল আলোচিত সেই পোস্ট। সেখানে তিনি লেখেন, “১০০ বছর আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ২০০ বছর আগে ফরাসি সাম্রাজ্য, ৪০০ বছর আগে স্প্যানিশ সাম্রাজ্য—সবাই নিজেকে অপরিহার্য ভাবত। শেষ পর্যন্ত কেউ টেঁকেনি। ক্ষমতা ক্ষয় হয়, প্রভাব সরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রও যদি সম্মান হারায়, বিশ্ব তবু এগিয়ে যাবে।” পোস্টের উপসংহারে যোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্ব চলবে।”
চীনা পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বেইজিংয়ে বলেন, “আমরা সংঘাতের তীব্রতা বাড়তে দেখছি—এই মুহূর্তে জরুরি হল আগুন নেভানো, কাঠ জোগাড় করা নয়।” তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আঙুল তুলে বলেন, যেসব দেশ ইসরাইলের ওপর ‘বিশেষ প্রভাব’ খাটাতে পারে, তারা দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়, ইরান ও ইসরাইল থেকে চীনা নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপক অভিযান চলছে; প্রাথমিক পর্যায়ে ১,৬০০‑এর বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই ইরান ছেড়েছেন, আরও কয়েক শ’ ইসরাইলি ভূখণ্ড থেকে মিশরের টাবা সীমান্ত দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শি‑র সাম্প্রতিক মন্তব্য বেইজিংয়ের বহুধাবিস্তৃত ‘মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সাম্রাজ্যগত ইতিহাস টেনে যুক্তরাষ্ট্রকে খোঁচা দেওয়ার এই কৌশল বিশেষত ‘গ্লোবাল সাউথ’‑এ চীনের ভাবমূর্তি মজবুত করার চেষ্টা—যেখানে ওয়াশিংটনের একাধিপত্যবাদী ইমেজ নিয়ে ইতিপূর্বেই অসন্তোষ রয়েছে।
হোয়াইট হাউস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শি‑র এক্স পোস্টের জবাব দেয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরালি ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, “চীন যদি সত্যিই স্থিতিশীলতা চায়, তবে তারা ইরানের উপর চাপ বাড়াতে পারে যাতে ইসরাইল‑ভিত্তিক সন্ত্রাসী হামলা থামে।” অপরদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দাবি করেছেন, “ইরানকে শর্তহীন সমর্পণ করতে হবে, নতুবা ফল ভালো হবে না।” এই পাল্টাপাল্টি রেটোরিকই স্বভাবতই মঞ্চকে আরও উত্তপ্ত করেছে।
প্লেন থেকে নামার আগেই স্ত্রীর ‘চড়’! ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বিতর্কের কেন্দ্রে
৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে ইউক্রেন, রাশিয়া কি সম্মত হবে?
মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে শি পশ্চিম এশিয়াকে “শীর্ষ অগ্রাধিকার” বলে উল্লেখ করেন এবং ইসরাইলি বিমান হামলার সমালোচনা করেন। দু’নেতাই জোর দিয়ে বলেন, “হস্তক্ষেপ নয়, কূটনীতি—এটাই একমাত্র পথ।”
কূটনৈতিক শিবির বলছে, শি‑র বার্তাটি তিনটি স্তরে কার্যকর:
যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক সংকেত—সমরাস্ত্র বা নিষেধাজ্ঞা নয়, ইতিহাসই যে বড় শাসক, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
গ্লোবাল সাউথ‑এর কাছাকাছি আসা—‘সাম্রাজ্য পতন’‑এর উদাহরণ উন্নায়নশীল বিশ্বে বেশ গ্রহণযোগ্য বয়ান, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড‑এর পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্য নয়া ভূমিকা—ইরান‑সৌদি সমঝোতা করিয়ে যে ‘পিস‑ব্রোকার’ ইমেজ চীন গড়েছে, তা আরও পোক্ত করা।
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জন থামে কি না, তার উপরই নির্ভর করবে শি‑র হুঁশিয়ারির বাস্তব অভিঘাত। ওয়াশিংটন আপাতত ‘ইরানকে কাবু’ রাখতে মরিয়া, আর বেইজিং বলছে—‘ছায়া থেকে অদৃশ্য হোন, আলোয় এসে কূটনীতি করুন’। ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি অবশ্য জানে, শেষ কথা বলে সময়ই।
আরও পড়ুন :
‘খামেনিকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না’, সোরোকা হাসপাতালে ইরানের হামলার পর ইজরায়েলের সরাসরি হুমকি
ট্রাম্পকে ‘বিশেষ বার্তা’ সহ জার্সি উপহার রোনালদোর