BrahMos
ইসলামাবাদ, ২৯ মে: পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রত্যাঘাত হিসাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে এখনও। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতীয় সেনা সরাসরি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে উত্তররপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগেই দাবি করেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ব্রহ্মস (BrahMos) ব্যবহার করে পাক সামরিক ঠিকানায় আক্রমণ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক দাবি করে আলোড়ন ফেলেছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-পর্বে পাক সেনার প্রত্যাঘাতের আগেই হামলা চালাতে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ভারত। নিশানায় ছিল পাক বায়ুসেনার ঘাঁটি। ৯-১০ তারিখের রাতে আচমকা সেই হামলা হয়েছিল বলে দাবি করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।
শেহবাজের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের পক্ষ থেকে এমন কোনও তথ্য আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
এই দাবি শুধু পাকিস্তানের কূটনৈতিক মহলে নয়, ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও সৃষ্টি করেছে নতুন বিতর্ক। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ‘মাইন্ড গেম’ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হতে পারে।
পাকিস্তানের এক প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেহবাজ বলেন,
“আমরা যখন ভাবছিলাম পাল্টা হামলা করব, ভারত তার আগেই আমাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ব্রহ্মোস মিসাইল ছুড়ে দেয়। আমরা অবাক হয়ে যাই। ভারত আগেই পদক্ষেপ নেয়।”
শেহবাজ আরও বলেন, “এরপর আমরা বুঝতে পারি যে, ভারতের সঙ্গে যেকোনো সংঘর্ষে আমাদের ক্ষয় হবে অনেক বেশি। তাই আমরা দ্রুত কূটনৈতিক পথে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করি।”
ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস মিসাইল বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল। এই মিসাইল ভূমি, আকাশ ও সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। এর গতি ২.৮ মাক, অর্থাৎ শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ দ্রুত।
ধ্বংস PL-15 মিসাইল এবং পাকিস্তানি মিরাজ, চিন-পাকিস্তানকে কড়া বার্তা ভারতের
শেহবাজের দাবি অনুযায়ী, এই ব্রহ্মোস মিসাইল সরাসরি পাকিস্তানের তিনটি এয়ারবেসকে লক্ষ্য করেছিল। যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি ছিল এক কৌশলগত ‘pre-emptive strike’। তবে এর কোনো উপগ্রহচিত্র, রিপোর্ট বা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তৎকালীন সময়ে দেখা যায়নি। শাহবাজ় অবশ্য সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও বিমানঘাঁটির নাম করেননি। তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-পরবর্তী সংঘাতপর্বের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ জানিয়েছিল, পাক বায়ুসেনার রসদ সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র নূর খানে আঘাত হেনেছে ব্রহ্মস।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন তুঙ্গে। এমন অবস্থায় ভারতকে টার্গেট করে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি হয় সম্পূর্ণ মিথ্যে, অথবা সেনাবাহিনীর কোনো গোপন কৌশল ছিল যেটা সরকারি স্তরে কখনও জানানো হয়নি।”
শেহবাজের এই মন্তব্যের ফলে আবারও আলোচনায় উঠে এল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার ইতিহাস, এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও কৌশলের বিষয়টি। এখন দেখার বিষয়—ভারত সরকার এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কী পদক্ষেপ নেয়।
আরও পড়ুন :
ভারতের ‘কালাদান’ প্রজেক্ট: বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা ছেড়ে উত্তর-পূর্বে পৌঁছনোর নতুন রাস্তা
আলিপুরদুয়ারে জনসভা থেকে মোদীর তৃণমূল বিরোধী তোপ: ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু