Breaking News

সির ক্রিক বিরোধ ভারত পাকিস্তান সীমান্ত

সির ক্রিক বিরোধ কি ? ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পুরনো ক্ষত আবারও সামনে

আরব সাগরের তীরে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সির ক্রিক অঞ্চল আজও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অমীমাংসিত সীমান্ত বিবাদের প্রতীক।

সির ক্রিক বিরোধ ভারত পাকিস্তান সীমান্ত : পুরনো সমস্যা আবার আলোচনায়

সির ক্রিক বিরোধ ভারত পাকিস্তান সীমান্ত

ক্লাউড টিভি বিশ্লেষণ : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সির ক্রিক নিয়ে বিরোধ নতুন নয়। এই বিরোধের শুরু প্রায় শতবর্ষ আগের।
১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের সময়ে বম্বে সরকার একটি চুক্তি তৈরি করে। সেই Bombay Resolution অনুযায়ী, কচ্ছের রাজা ও সিন্ধ বিভাগের মধ্যে সীমারেখা নির্ধারণ হয়েছিল।

তবে এখান থেকেই জন্ম নেয় বিতর্ক। পাকিস্তানের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী পুরো সির ক্রিক এলাকা সিন্ধ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, ভারত বলছে সীমা ক্রিকের মাঝখান দিয়েই যেতে হবে, যাকে “মিড চ্যানেল থিওরি” বলা হয়।

এই মতভেদের কারণেই দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ আজও সম্ভব হয়নি।


ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব

সির ক্রিক হলো প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক জোয়ারভাটা নদীনালা। এটি কচ্ছ উপসাগর থেকে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে।
এই ক্রিক অঞ্চল নোনা জল ও কাদামাটির মিশ্র এলাকায় অবস্থিত।এটি ভারতের গুজরাত রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের দক্ষিণ অংশে বিস্তৃত।তাই এর অবস্থান দুই দেশের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।আরব সাগরে প্রবেশের একটি পথ এই সির ক্রিক দিয়েই যায়। এই  কারণে, সামুদ্রিক সীমারেখা ও প্রতিরক্ষা দৃষ্টিকোণ থেকেও এই জায়গাটি সংবেদনশীল।


বিতর্কের আইনি দিক

ভারত থালওয়েগ নীতি (Thalweg Doctrine)-এর ওপর নির্ভর করে বলে যে, নাব্য নদীর মাঝখান দিয়েই সীমা নির্ধারণ করা উচিত।কারণ, নদী যদি জোয়ারে নাব্য হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেটি মাঝনালিকা দিয়েই বিভক্ত হয়।

পাকিস্তানের যুক্তি ঠিক উল্টো।তারা বলে, সির ক্রিক নেভিগেবল নয়, অর্থাৎ নৌচলাচলের উপযুক্ত নয়। তাই সীমারেখা হওয়া উচিত পূর্ব তীর বরাবর, যাকে “গ্রিন লাইন” বলা হয়।

এই দ্বন্দ্বের কারণে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই নিজেদের মানচিত্রে ভিন্ন সীমারেখা চিহ্নিত করেছে।

মায়ানমারে মার্কিন ‘ছায়াযুদ্ধ’ পরিকল্পনা: উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী : ইমিউন সিস্টেমের রহস্য উদ্ঘাটনে যুগান্তকারী অবদান


অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক প্রভাব

এই বিরোধ শুধু ভূখণ্ড নয়, অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।সির ক্রিকের আশেপাশের এলাকায় রয়েছে সমুদ্রজ মাছ, গ্যাস ও তেলের সম্ভাবনা।তাই এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ মানে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া।

এছাড়া, সির ক্রিকের অবস্থান সামুদ্রিক সীমা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ।যদি সীমা ক্রিকের মাঝ দিয়ে টানা হয়, তবে ভারতের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (EEZ) বাড়বে।কিন্তু যদি পাকিস্তানের দাবিকৃত পূর্বতীর ধরে সীমা নির্ধারণ হয়, তবে ভারতের EEZ অনেকটাই কমে যাবে।


আলোচনায় অচলাবস্থা

১৯৬৮ সালে “রান অব কচ্ছ ট্রাইব্যুনাল” সীমান্ত বিরোধ নিয়ে রায় দিয়েছিল।তবে সির ক্রিক অংশকে তখন আলোচনার বাইরে রাখা হয়।তারপর ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে দুই দেশ অন্তত ১২ দফা বৈঠক করেছে।কিন্তু কোনো দফাতেই চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।ভারত প্রস্তাব দিয়েছিল, আগে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা হোক, তারপর ভূমি সীমা নির্ধারণ হবে।পাকিস্তান সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তারা আন্তর্জাতিক সালিসি চেয়েছিল, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।

ফলে আজও সির ক্রিক বিরোধ ঝুলে আছে, দুই দেশের সম্পর্কের কাঁটা হয়ে।


বর্তমান প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সির ক্রিকের গুরুত্বের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করেছেন।তিনি বলেছেন, “কারাচির এক রুট সির ক্রিক দিয়ে যায়, তাই এখানে শত্রুপক্ষের কোনো গতিবিধি মেনে নেওয়া হবে না।”

এই বক্তব্যের পর বিশ্লেষকরা বলছেন,সির ক্রিক ইস্যু আবারও আন্তর্জাতিক আলোচনায় এসেছে।কারণ এটি শুধু সীমান্ত নয়, বরং ভারতের পশ্চিম উপকূলের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির সঙ্গেও যুক্ত।এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও এই ক্রিকের আকৃতি ও নাব্যতা পরিবর্তিত হচ্ছে।ফলে ভবিষ্যতে সীমারেখা নির্ধারণ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

দুই দেশ চাইলে এই ইস্যু মীমাংসা করতে পারে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে।তবে তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা সমাধান হলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।

আরও পড়ুন :

কটক দাঙ্গা: ৮ জন গ্রেফতার, কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে প্রশাসন

প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়াল স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাও, মাঠেই জানাল মানবিক বার্তা

ad

আরও পড়ুন: