Taliban Dam Kunar River
ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসন এমন এক পদক্ষেপ নিল যা দুই দেশের সম্পর্কে আরও টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। আফগানিস্তান সরকার ঘোষণা করেছে, পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত কুনার নদী (Kunar River)-এর উপর দ্রুতগতিতে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
এই নদী আফগানিস্তানের পূর্ব প্রদেশ কুনার থেকে উৎপন্ন হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রবেশ করে। ফলে নদীর জলপ্রবাহ বন্ধ বা সীমিত হলে পাকিস্তানের বিশাল অংশে সেচ ও পানীয় জলের মারাত্মক সংকট দেখা দিতে পারে।
আফগান শক্তি ও জলসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগের অপেক্ষা না করেই দেশীয় প্রকৌশল সংস্থাগুলিকে বাঁধ নির্মাণের চুক্তি দেওয়া হবে। প্রশাসনের দাবি, এর মাধ্যমে আফগানিস্তান নিজের কৃষি ও শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে।
তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ জানিয়েছেন,
“আফগানিস্তান তার প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে। অন্য দেশকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নয়, বরং নিজেদের উন্নয়নই মূল লক্ষ্য।”
তবে ইসলামাবাদে কূটনৈতিক মহল এই পদক্ষেপকে ‘জল যুদ্ধের’ প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, আফগানিস্তানের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বিবাদের পাশাপাশি জলবণ্টন নিয়েও নতুন সংকট সৃষ্টি করবে।
⚠️ কেন এই নদী এত গুরুত্বপূর্ণ
কুনার নদী হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে পাকিস্তানের চিত্রাল নদীতে মিলিত হয়।
নদীটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বহু কৃষিজমির প্রাণরস।
আফগানিস্তান যদি বাঁধ তৈরি করে জল প্রবাহ সীমিত করে, তবে পাকিস্তানের জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার বড় অংশ বিপর্যস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় জলসম্পদকে কেন্দ্র করে নতুন ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে — একদিকে ভারত ও পাকিস্তানের ইন্দাস নদী চুক্তি নিয়ে বিতর্ক, অন্যদিকে আফগানিস্তানের নতুন পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য আরেক মাথাব্যথা।
পাকিস্তান‑আফগান সীমান্ত সংঘর্ষ — ভারতীয় স্বার্থে সম্ভাব্য প্রভাব
ইসলামাবাদ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে সরকারি সূত্রের দাবি— বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম The Express Tribune জানিয়েছে, জলপ্রবাহ কমে গেলে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে পানীয় জলের তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে।
জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশীয় জলনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালিবান প্রশাসনের এই পদক্ষেপ অঞ্চলে নতুন জলবৈরিতার সূচনা করতে পারে। আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তে আগেই নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী ইস্যুতে উত্তেজনা রয়েছে; তার সঙ্গে এবার যোগ হচ্ছে জলনীতি সংক্রান্ত বিরোধ।
আরও পড়ুন :
সলমান খানকে “সন্ত্রাসবাদী” ঘোষণা করল পাকিস্তান! বালুচিস্তান মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক বিতর্ক