Breaking News

TrumpVsMusk

ট্রাম্পের ‘ডিপোর্ট’ হুমকি: এলন মাস্কের বিরুদ্ধে রাজনীতির নতুন অস্ত্র?

“এমন নয় যে আমি এলন মাস্কের ভক্ত, কিন্তু প্রেসিডেন্ট যদি ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের প্রতিশোধ নিতে নাগরিকত্ব বাতিল বা ডিপোর্টেশন নিয়ে কথা বলেন—তবে সেটা শীতল আতঙ্কের বার্তা হয়ে যায় আমাদের গণতন্ত্রের জন্য।”

TrumpVsMusk: A New Political Showdown Unfolds %%page%% %%sep%% %%sitename%%

TrumpVsMusk

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আবারও শুরু হয়েছে তীব্র আলোড়ন। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুই চেনা মুখ—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেসলা/স্পেসএক্স প্রধান এলন মাস্ক (TrumpVsMusk) । প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি এক জনসভায় এলন মাস্ককে “দেশত্যাগে বাধ্য করা” বা “ডিপোর্ট” করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এক নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রথমদিকে অনেকে একে ট্রাম্পের চিরাচরিত ‘উস্কানিমূলক কথা’ হিসেবে উড়িয়ে দিলেও পরে বিষয়টি আরও গুরুতর মোড় নেয়, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র জানান যে “DOGE (Department of Government Efficiency)”-এর মাধ্যমে এলন মাস্কের অবস্থান পর্যালোচনা করা হবে।

১ জুলাই এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন:

“Green subsidy ছাড়া এলন মাস্ককে হয়তো তাঁর জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হবে… সম্ভবত আমাদের DOGE-এর উচিত ব্যাপারটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা।”

এই বক্তব্যটি সামনে আসতেই শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়। ট্রাম্পের বক্তব্যের পেছনে কারণ হিসেবে উঠে আসে মাস্কের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড। তিনি ট্রাম্প-সমর্থিত নতুন বাজেট ও কর সংস্কার পরিকল্পনা—“One Big Beautiful Bill”–এর কঠোর সমালোচনা করেন। মাস্ক বলেন, এই বিল শুধু গ্রিন এনার্জি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করবে না, বরং এটি “উন্নয়ন ও পরিবেশবাদকে ধ্বংস করার দিকে ঠেলে দেবে।”

এছাড়া এলন মাস্ক সম্প্রতি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি সম্ভাব্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনেরও ইঙ্গিত দেন, যা অনেকের চোখে ২০২৮ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য হুমকি হতে পারে।

ট্রাম্প–মাস্ক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেল জেফ্রি এপস্টেইনের ছায়া: ওয়াশিংটনে বিতর্ক, তদন্তের দাবি তুঙ্গে

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইলন মাস্কের পদত্যাগ, বিতর্কের অবসান

 এলন মাস্ক কি সত্যিই ‘ডিপোর্ট’ হতে পারেন?

না, বাস্তবতার বিচারে মাস্ককে দেশছাড়া করা বা তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা আইনি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এবং প্রায় অসম্ভব। এলন মাস্ক ২০০২ সালে বৈধভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রাকৃতিকায়িত নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেবলমাত্র প্রতারণা, দেশদ্রোহিতা বা সন্ত্রাসবাদের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে বাতিল করা যেতে পারে।

Guardian-এর বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট জাস্টিস মালালা এই প্রসঙ্গে লেখেন:

“এটি এক আতঙ্কজনক দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্রের ক্ষমতা দিয়ে কোনো ব্যক্তির মতপ্রকাশ বন্ধ করা, বিশেষ করে সেই ব্যক্তি একজন নাগরিক হলে—এটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের লজ্জাজনক উদাহরণ।”

তিনি আরও বলেন, “বেলারুশ বা ক্যামেরুনের মতো দেশে এধরনের কৌশল দেখা যায়—যুক্তরাষ্ট্রে নয়।”

এমন নয় যে এলন মাস্ক সমালোচনার ঊর্ধ্বে। তিনি অনেক সময় নিজেই নানাবিধ বিভ্রান্তিকর বা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করেছেন। তাঁর মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম X (পূর্বতন টুইটার)-এ উগ্র ডানপন্থীদের প্রচার বা ষড়যন্ত্রমূলক মতাদর্শ ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার। ট্রাম্প যদি ব্যক্তিগত মতভেদ বা সমালোচনার জন্য একজন নাগরিকের নাগরিকত্ব রদ বা তাকে দেশছাড়া করার চেষ্টা করেন—তা হলে প্রশ্ন উঠবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে পূর্বে নাগরিকত্ব বাতিল বা দেশছাড়া করার নজির থাকলেও, সেগুলো বেশিরভাগই ছিল প্রতারণার মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জনের মামলায়। রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য কোনো নাগরিককে ডিপোর্ট করার উদাহরণ সমসাময়িক ইতিহাসে নেই।

Guardian বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম এবং বিপজ্জনক নজির।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্পের এই হুমকি আসলে একটি রাজনৈতিক ‘signal’—যে তিনি এখন কেবল বিরোধী দল বা গণমাধ্যম নয়, বড় কর্পোরেট ব্যক্তিত্বকেও ‘control’ করতে প্রস্তুত। এটি এমন এক ধরনের ম্যাকার্থি যুগের ঘৃণ্য রাজনীতি, যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভয়ের আবহ তৈরি করা হয়।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ড. মেরি হফম্যান বলেন,

“এটি শুধু মাস্ককে নয়—যে কোনো উচ্চপ্রোফাইল বা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকেও সতর্কবার্তা: ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমিও কিছু করতে পারি।’”

ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান নেতারাও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর হুয়ান গার্সিয়া বলেন,

“এটা আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকে আঘাত করে। কোনো প্রেসিডেন্টকে আমরা এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দিতে পারি না।”

এমনকি রিপাবলিকান পার্টির মধ্যমপন্থীরা বলছেন, “এধরনের ‘ডিপোর্টেশন হুমকি’ শুধু রাজনৈতিক খেলায় উত্তেজনা বাড়ায় এবং দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

আরও পড়ুন :

লন্ডনের রাস্তায় বিরাট-অনুশকা! লুকিয়ে ভিডিও, কড়া চাহনিতে জবাব দিলেন কোহলি

নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলেন ইলন মাস্ক, নাম ‘আমেরিকা পার্টি’

ad

আরও পড়ুন: