WBDAcase
কলকাতা, ১১ জুন, ২০২৫ (Cloud TV News): পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। বহুচর্চিত মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (WBDAcase) বিতর্কের মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সম্প্রতি এক অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে সমস্ত কর্মচারীদের বকেয়া ডিএর অন্তত ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে।
পাকিস্তানে ৪৪% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে, চরম দারিদ্র্যে ভুগছে ৪ কোটির বেশি
এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের খরচ প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা, যা বর্তমান রাজ্য বাজেটে একেবারেই অবরাদ্দ। রাজ্য প্রশাসনের জন্য এটি এক বিশাল আর্থিক চ্যালেঞ্জ, যার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে।
মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের আইনি দ্বন্দ্ব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ডিএ প্রদান সংক্রান্ত বিলম্বের জেরে এই মামলা প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টে চলে। পরে আপিল হয়ে পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টে।
আদালত তার অন্তর্বর্তী আদেশে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ডিএ প্রদান কোনো “বিবেচনাধীন ইচ্ছা” নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব, যা সরকার এড়াতে পারে না। যদি নির্দেশ মানা না হয়, তাহলে আদালত অবমাননার অভিযোগে শীর্ষ আমলাদের জেল হবার ঝুঁকি আছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩,৭৪,১৯১ কোটি টাকা। ছয় সপ্তাহে গড় রাজস্ব আয় হতে পারে প্রায় ৪৩,১৭৬ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে ডিএ বাবদ ১০,০০০ কোটি টাকা দিতে গেলে সরকারের হাতে বাকি থাকবে প্রায় ৩৩,১৭৬ কোটি টাকা—যা দিয়ে চলতি ব্যয় সামলানো কঠিন।
আরও সমস্যা হলো, WMA (Wage and Means Advance) হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে সর্বোচ্চ পাওয়া যাবে মাত্র ৩,৪৫৬ কোটি টাকা। ফলে সরকারকে অন্যান্য খাতে ব্যয় হ্রাস করতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সরকার এই ব্যয় মেটাতে চায়, তাহলে সামাজিক প্রকল্পে কাটছাঁট করা ছাড়া উপায় থাকবে না। শুধু ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পেই বরাদ্দ ১৮,৬৯১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ।
তবে তৃণমূল সরকারের কাছে এই প্রকল্পগুলি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেখা গেছে, এই প্রকল্পগুলি ভোটব্যাঙ্ক তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি শুধুমাত্র গরিবদের জন্য এই প্রকল্প সীমিত করবেন? নাকি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পুরোনো ফর্মুলাতেই থাকবেন?
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ডিএ সমতা নষ্ট হয়। ROPA ২০১৯ বিধিতে ‘ডিএ’ শব্দটি কার্যত বাদ পড়ে, শুধুমাত্র দু’টি ক্ষেত্র ছাড়া। স্পষ্টভাবে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কোনও বকেয়া অর্থ কর্মচারীদের দেওয়া হবে না।
এই পদক্ষেপ কর্মচারীদের আইনি লড়াইয়ের পথে ঠেলে দেয়। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট—উভয়ই ROPA ২০০৯-এর লঙ্ঘন এবং “রাজস্ব সঙ্কট” যুক্তিকে খারিজ করে দেয়।
চূড়ান্ত রায় এখনো আসেনি, তবে একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত ৪ শতাংশের মুদ্রাস্ফীতি সীমার মধ্যে থাকলে ডিএর গুরুত্ব হয়তো কমবে। তবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের জন্য এটি এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএ বিতর্ক শুধু আইনি নয়—এটি প্রশাসনিক দক্ষতা, আর্থিক পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার এক জটিল সমীকরণ। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ রাজ্য সরকারকে এক কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছে।
আগামী দিনে চূড়ান্ত রায়ে যদি ডিএকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে তা দেশের অন্যান্য রাজ্যেও উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন :
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আশপাশে মদ ও মাংস নিষিদ্ধ ঘোষণা, বিজেপির কড়া পদক্ষেপ পবিত্রতা রক্ষায়