নেপাল নতুন কুমারি আর্যতারা
কাঠমাণ্ডু: নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল দেশ। মাত্র ২ বছর ৮ মাস বয়সের আর্যতারা শাক্য কে নতুন কুমারি বা জীবন্ত দেবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আবারও বহাল হলো শতাব্দী-প্রাচীন নেপালি ঐতিহ্য, যেখানে একজন কন্যাশিশুকে দেবীর প্রতিরূপ হিসেবে পুজো করা হয়।
নেপালে ‘কুমারি’ শব্দটির অর্থ হলো কুমারী বা অবিবাহিতা কন্যা। হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, কুমারির মধ্যে দেবী শক্তির বাস। তাকে জীবন্ত দেবী হিসেবে পুজো করা হয়। প্রতি বছর গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যেমন ইন্দ্র যাত্রা বা দুর্গাপূজার সময় কুমারিকে প্রকাশ্যে আনা হয় এবং হাজার হাজার ভক্ত তার আশীর্বাদ নিতে ভিড় জমায়।
কুমারি নির্বাচন করা হয় কঠোর মানদণ্ডে। শিশুর ত্বক, চুল, দাঁত, চোখে কোনো দাগ বা ত্রুটি থাকা যাবে না। তার মধ্যে থাকতে হবে নির্ভীকতা, যাতে অন্ধকার বা হঠাৎ চিৎকারেও সে ভয় না পায়। এছাড়া কুমারি অবশ্যই শাক্য সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধ পরিবার থেকে হতে হবে।
এই নিয়ম অনুসারে আর্যতারাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভক্ত ও পুরোহিতদের উপস্থিতিতে এক বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকে কুমারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তিনি নেপালের জাতীয় ধর্মীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা পেলেন।
নেপালে জনরোষে দাবানল: প্রেসিডেন্ট ভবনে আগুন, প্রাচণ্ডের বাড়িতে ভাঙচুর, ওলির ইস্তফা দাবি
প্রতিদিন ২০ গৃহবধূর মৃত্যু, ভারতে ৯০ শতাংশ বিয়েতে যৌতুক, অর্থনীতির উন্নতি হলেও মানসিকতা অপরিবর্তিত
এর আগে ২০১৭ সাল থেকে ত্রিশ্না শাক্য কুমারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি কৈশোরে প্রবেশ করায় তার কুমারিত্ব শেষ হয়েছে। ফলে নতুন কুমারি নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। সেই জায়গা নিয়েছেন ছোট্ট আর্যতারা।
কুমারি হওয়ার পর একটি শিশুর জীবন প্রায় সম্পূর্ণ বদলে যায়। সাধারণ স্কুলে যাওয়া বা খেলার সুযোগ থাকে না। বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয় একটি নির্দিষ্ট ভবনের ভেতর। কুমারির দৈনন্দিন জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় পুরোহিত ও সহকারী দলের দ্বারা।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন কুমারিদের ব্যক্তিগত টিউটরের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। এমনকি টেলিভিশন দেখার মতো কিছু আধুনিক সুবিধাও তারা পাচ্ছে। তবে সাধারণ শিশুর মতো স্বাধীন জীবনযাপন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
কুমারির দায়িত্ব শেষ হলে তারা আবার সাধারণ জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক প্রাক্তন কুমারিই সমাজে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়েন। ছোট থেকেই দেবী হিসেবে পূজিত হওয়ার পর হঠাৎ সাধারণ মেয়ের ভূমিকায় মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়।
সরকার প্রাক্তন কুমারিদের একটি মাসিক পেনশন দেয়, যা ন্যূনতম বেতনের থেকে কিছুটা বেশি। তবে এই ভাতা তাদের ভবিষ্যতের সব প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়। তাই প্রাক্তন কুমারিদের জীবন প্রায়শই নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়।
নেপালে কুমারিতন্ত্র একদিকে যেমন ভক্তি ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতীক, অন্যদিকে আধুনিক সমাজে এটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। মানবাধিকারকর্মীদের একাংশ মনে করেন, শিশুদের এমনভাবে ঘরবন্দি করে দেবীর মর্যাদা দেওয়া তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করছে। তবে অপরপক্ষের যুক্তি, কুমারি সংস্কৃতি নেপালের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
আর্যতারার অভিষেকের মধ্য দিয়ে নেপাল আবারও দেখল জীবন্ত দেবীর আগমন। কত বছর তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন, তা নির্ভর করবে তাঁর কৈশোরে প্রবেশের উপর। তবে এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে, তাঁর উপস্থিতি আগামী কয়েক বছর নেপালের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন :
মার্কিন কংগ্রেসে পাস হল না অর্থায়ন বিল, যুক্তরাষ্ট্রে শুরু সরকারি শাটডাউন