AucklandCityFC
ক্লাউড টিভি স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব টুর্নামেন্ট মানেই নামি-দামি ক্লাব, তারকাখচিত লাইন-আপ, বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। তবে সেই জগতে একেবারেই ব্যতিক্রম এক অধ্যায় লিখছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটি এফসি (AucklandCityFC)। কোনো গ্ল্যামার নেই, নেই বিলাসিতা—এই দলে রয়েছেন স্কুল শিক্ষক, সফট ড্রিঙ্কস বিক্রেতা, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ও এমনকি ছাদ পরিষ্কার করার পেশায় যুক্ত মানুষ।
এতদিন যাদের পেশা ছিলো অফিস, স্কুল বা দোকান—তারা এখন বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে, খেলতে নামছেন জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখের মতো মহারথীদের বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির টিকিউএল স্টেডিয়ামে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হবে এই ম্যাচ, যা অকল্যান্ড সিটির ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়ে উঠতে চলেছে।
ইউরোপের খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাবেন হালান্ড!
তবে কীভাবে এত অ-আলোচিত একটা ক্লাব পৌঁছে গেল ক্লাব বিশ্বকাপে?
অকল্যান্ড সিটি ওসেনিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন। ১২ বার ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। টানা চার বছরের র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে এবারও তারা সুযোগ পেয়েছে। তবে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপ তাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং, কারণ এবার ৩২ দলের বর্ধিত ফরম্যাটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তারা। গ্রুপেও রয়েছে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ—বায়ার্ন মিউনিখ, বেনফিকা, ও বোকা জুনিয়র্স।
দলের জেনারেল ম্যানেজার গর্ডন ওয়াটসন বলেন, “আমরা আন্ডারডগের মধ্যেও আন্ডারডগ। কিন্তু আমরা এসেছি একটা স্বপ্ন নিয়ে।”
এই স্বপ্নের পেছনে রয়েছে অগণিত ত্যাগ। খেলোয়াড়রা কেউ স্কুলে পড়ান, কেউ বিক্রি করেন কোল্ড ড্রিঙ্কস, কেউ আবার সারা দিন ছাদ পরিষ্কার করেন। এরপর সন্ধ্যায় অনুশীলন, আর সপ্তাহান্তে ম্যাচ। যারা এই সফরে এসেছেন, তাদের অনেকেই মূল চাকরি থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন।
ওয়াটসন আরও বলেন, “আমরা এখানে শুধু নিজেদের জন্য আসিনি। আমাদের লক্ষ্য আরও বড়। ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আমরা মাউন্ট রসকিল ইন্টারমিডিয়েট স্কুলের সঙ্গে মিলে একটি আধুনিক অল-ওয়েদার স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি গড়তে চাই। ফুটবল হোক আমাদের কমিউনিটির ভবিষ্যতের রসদ।”
এই দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ—তাদের মানসিকতা।
দলের ফরোয়ার্ড হ্যারিস জেব বলেন, “ছোটবেলায় হ্যারি কেইনদের খেলা দেখতাম টিভিতে। এখন তাদের বিপক্ষে মাঠে নামব! এটা স্বপ্নও নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু।” অন্যদিকে রায়ান ডি ভ্রিস বলেন, “অনেকেই সকালে সন্তানকে বিদায় জানিয়ে বের হন, ফিরেন রাত ১০টায়। এমন কঠিন রুটিনের মধ্যেও আমরা এই যাত্রা উপভোগ করছি।”
অকল্যান্ড সিটি যদি কোনো ম্যাচ না-ও জেতে, তবুও তারা অন্তত ৩.৫৮ মিলিয়ন ডলার পাবে। আর চ্যাম্পিয়ন হলে পুরস্কার ১২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে তাদের দৃষ্টি শুধু অর্থের দিকে নয়, বরং নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে।
এটাই বিশ্বকাপের সবচেয়ে মানবিক গল্প।
তারা প্রমাণ করেছে, পেশাদারিত্ব মানেই কর্পোরেট ক্যাম্প নয়, বরং একনিষ্ঠতা, পরিশ্রম আর হৃদয়ের গভীর থেকে খেলা ভালোবাসা। এই দলের কোনো তারকা নেই, কিন্তু এদের প্রত্যেকেই ‘তারকা’—নিজেদের পরিবারের, কমিউনিটির, আর ফুটবল বিশ্বের কাছে।
আরও পড়ুন :
বাভুমার স্ত্রী ফিলা লোবি—বিল্ডার, সমাজসেবী, আর একাধিক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক!
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি—“ইরান হামলা করলে পূর্ণ শক্তিতে প্রতিহিংসা”