AndreRussell FranchiseOverCountry
ক্লাউড টিভি স্পোর্টস ডেস্ক: একদিন বিশ্বক্রিকেটের রাজা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, কার্টলি অ্যামব্রোস বা ব্রায়ান লারাদের ব্যাট-বলের ঝড়ে কাঁপত ক্রিকেট বিশ্ব। আজ সেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটই ধুঁকছে। বিশ্বকাপের মূল পর্বে পৌঁছাতে পারছে না, এমনকি কোয়ালিফায়ার থেকেও বাদ পড়ার মতো অবস্থা! কে দায়ী এই পতনের জন্য? বহু বিশ্লেষক যেমন বোর্ডের গঠনগত দুর্বলতার দিকে আঙুল তুলেছেন, তেমনি আরেক অংশ সরাসরি দায়ী করছেন খেলোয়াড়দের—যারা দেশের হয়ে খেলার চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেই ((AndreRussell FranchiseOverCountry)) বেশি প্রাধান্য দেন।
শীঘ্রই আসছে নবনিযুক্ত গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার স্বাক্ষর করা নতুন ₹২০ নোট, ঘোষণা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের
এবার এই বিতর্কে মুখ খুললেন একসময় জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ, বর্তমানে টি-টোয়েন্টি তারকা আন্দ্রে রাসেল ।
সম্প্রতি ইংলিশ দৈনিক The Guardian-এ দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে আন্দ্রে রাসেল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জাতীয় দলের হয়ে খেলার তুলনায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলা অনেক বেশি যৌক্তিক ও নিরাপদ তাঁর কাছে।
“আপনি হয়তো ৫০-১০০টা টেস্ট খেলবেন, অথচ অবসরের পর আপনার হাতে থাকবে না কিছুই,” — এমন কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন রাসেল।
তিনি তুলনা করেছেন ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে—যেখানে জাতীয় দলের টেস্ট ক্রিকেটাররা কোটি কোটি টাকার চুক্তিতে থাকেন, অবসর-পরবর্তী জীবনও থাকে নিরাপদ ও সম্মানজনক।
কিন্তু ক্যারিবিয়ান বাস্তবতায় চিত্রটা পুরো উল্টো।
“আমাকে এক সময় টেস্ট দল থেকে বাদ দিয়েছিল। নির্বাচকেরা মনে করত, আমি সাদা বলের খেলোয়াড়। তারা কখনো টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে গুরুত্ব দেয়নি,”—অভিযোগ রাসেলের।
রাসেল স্বীকার করেছেন, তিনি এখন কেবল অর্থের দিকেই মনোযোগী। পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই তাঁর অগ্রাধিকার। আর তা সম্ভব শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেই।
“আমি এমন একটা জীবন চাই, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায় এবং পরিবারকে ভালোভাবে দেখভাল করা যায়,”— রাসেলের অকপট স্বীকারোক্তি।
উল্লেখ্য, রাসেল ক্যারিয়ারে উইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ৮৪টি টি–টোয়েন্টি ও ৫৬টি ওয়ানডে।
তবে সম্প্রতি তিনি শুধুমাত্র সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন সামির অনুরোধে ফিরে এসেছেন টি–টোয়েন্টি দলে।
তবু তাঁর মন পড়ে থাকে আইপিএল, বিগ ব্যাশ, পিএসএল আর সিপিএলের টাকার দুনিয়ায়।
রাসেলের বক্তব্য হয়তো একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তবে বাস্তবতা হলো—এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিকাংশ বড় তারকা যেমন কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারিন, ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভোও দীর্ঘদিন জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলেননি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লোভে দেশের প্রতি উদাসীনতা এখন যেন একটি স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ক্রিকেট কাঠামোর দুর্বলতা, খেলোয়াড়দের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং বোর্ডের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্ক—সব মিলিয়েই এই পতনের মূলে রয়েছে।
রাসেলের সাক্ষাৎকার ঘিরে ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অনেকেই বলছেন, দেশের হয়ে খেলা গর্বের বিষয়—তাকে আর্থিক লাভ-ক্ষতির চোখে দেখা দুঃখজনক।
কেউ কেউ লিখেছেন:
“যদি সবাই এমন ভাবে, তাহলে জাতীয় দল আর থাকবে কোথায়?”
আন্দ্রে রাসেলের বক্তব্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—আধুনিক ক্রিকেট কতটা বদলে গেছে।
দেশের হয়ে খেলা এখন অনেকের কাছে সম্মানের নয়, বরং একরকম দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই মানসিকতা যদি না বদলায়, তাহলে শুধু ক্যারিবিয়ানই নয়—বিশ্ব ক্রিকেটে জাতীয় দলের গুরুত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে একদিন।
আরও পড়ুন :
কাশ্মীরে বিশ্বের সর্বোচ্চ ও দুর্গম রেলসেতু জয়ের নেপথ্যে কে এই মাধবী লতা?
পতৌদি নয়, এবার থেকে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি! ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজের নতুন নাম ঘোষণা