Ancelotti WorldCup2026
ক্লাউড টিভি রিপোর্ট | শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী : বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দল ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশটির লক্ষ্য ষষ্ঠ ট্রফি ঘরে তোলা। আর সেই লক্ষ্যেই বেছে নেওয়া হয়েছে ইতালির কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এই প্রথমবার কোনো জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন আনচেলত্তি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন তিনি—বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র (Ancelotti WorldCup2026 )।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আনচেলত্তির ব্রাজিলের প্রথম পরীক্ষায়ই উঠেছে প্রশ্ন। ঘরের মাঠে ইকুয়েডরের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র শুধু পয়েন্ট হারই নয়, বরং দলের আক্রমণভাগের দুর্বলতা ও কৌশলগত সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বল দখলে পিছিয়ে থাকা, গোলের সুযোগ তৈরি না করা—এই সবই প্রতিপক্ষ ইকুয়েডরের আধিপত্যের ইঙ্গিত দেয়। ফিনিশিংয়ে কিছুটা নিখুঁত হলে হয়তো ব্রাজিল ম্যাচটাই হেরে যেত।
কার্লো আনচেলত্তির নাম বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে কিংবদন্তির সমতুল্য। এসি মিলান, চেলসি, পিএসজি, বায়ার্ন মিউনিখ এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন জাতীয় লিগ। চ্যাম্পিয়নস লিগে তার অর্জন চারটি শিরোপা—দুইবার মিলান ও দুইবার রিয়ালের হয়ে। ক্লাব ফুটবলের সব শীর্ষ মঞ্চেই তিনি সফল।
তবে জাতীয় দলের দায়িত্ব এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। এবং তাও আবার এমন একটি দেশের, যারা শুধুই ট্রফি নয়—স্টাইল, দাপট ও ঐতিহ্য নিয়ে বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করতে অভ্যস্ত। ১৯৯৪ সালে তিনি ইতালির সহকারী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে ছিলেন, যেখানে ব্রাজিলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হারতে হয়। এবার সেই ব্রাজিলের হয়েই তিনি নেমেছেন বিশ্ব জয়ের লড়াইয়ে।
সিবিএফ তাকে যখন দায়িত্ব দেয়, তখন একটা বিষয় ছিল স্পষ্ট—এই সিদ্ধান্ত প্রথা ভেঙেছে। কিন্তু আনচেলত্তির দীর্ঘদিন ধরে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তাকে এ যাত্রায় বাড়তি সুবিধা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি ইতিমধ্যে ৩৪ জন ব্রাজিলিয়ানকে কোচিং করিয়েছেন, যার মধ্যে রোনালদো নাজারিও, কাফু, কাকাদের মতো কিংবদন্তি রয়েছেন।
সেলেকাওয়ের দায়িত্বে আনচেলত্তির ৫ বড় চ্যালেঞ্জ – বিশ্বকাপের স্বপ্নপথ কেমন হবে ব্রাজিলের?
আনচেলত্তিকে পেতে ‘ছাড়েনি কিছুই’ ব্রাজিল, স্কালোনির তুলনায় ৪ গুণ বেতন
রোনালদোকে তিনি সর্বকালের সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে অভিহিত করেন, আর কাফুকে মনে করেন সবচেয়ে পেশাদার। এ ধরনের মানসিকতা এবং স্টাইল বোঝার ক্ষমতা হয়তো আনচেলত্তিকে অনন্য করে তুলবে জাতীয় দলের কোচিংয়ে।
বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে ব্রাজিল রয়েছে চতুর্থ স্থানে, ১৫ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে। ইকুয়েডর তাদের চেয়ে এগিয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে। যদিও অঞ্চলটি থেকে সরাসরি ছয়টি দল মূল পর্বে উঠবে এবং সপ্তম দলকে প্লে-অফ খেলতে হবে, তবুও ব্রাজিলের মতো দলের কাছে শুধু কোয়ালিফাই করাই যথেষ্ট নয়—তাদের লক্ষ বিশ্বকাপ জয়।
আনচেলত্তির জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক। একটি দল গঠন করতে হবে যেখানে তারকারা একসঙ্গে খেলতে পারে, স্কোয়াডে ভারসাম্য রাখতে হবে, আর তার কৌশলগত মেধা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সফলভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
আনচেলত্তির শুরুটা প্রত্যাশিত ছিল না, তবে তার অভিজ্ঞতা এবং ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের প্রতি বোঝাপড়ার জন্য তাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। ক্লাব ফুটবলের সাফল্য যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনূদিত হয়, তবে হয়তো ব্রাজিল ২০২৬ বিশ্বকাপে আবারো সাম্বার জাদু দেখাতে পারবে।
আরও পড়ুন :
আনচেলত্তির অভিষেক ম্যাচেই হতাশা, ইকুয়েডরের বিপক্ষে ব্রাজিল গোলশূন্য
চিলিকে হারিয়ে শীর্ষস্থানে থেকেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, আমেরিকান মাটিতে ‘ট্যাঙ্গো’র প্রস্তুতি চূড়ান্ত