Bar Puja
শান্তিপ্রিয় রায় চৌধুরী : কয়েক বছর আগে পহেলা বৈশাখের আগে এক বড় ক্লাবের কর্মকর্তা বললেন পয়লা বৈশাখে আমাদের ক্লাবে চলে আসুন । জিজ্ঞাসা করেছিলাম বার পুজো (Bar Puja) হবে তো? তিনি বলেলেন, হবেনা মানে? বেশ ঘটা করেই হবে। ‘ঘটা করেই হবে’ এ কথা ভাবতে ভাবতেই কয়েক বছর আগের ময়দানে ছবিটা মনে পড়ল। হ্যাঁ, ৫০ বছর আগে বড় ক্লাবে বার পুজোর কথা। পুরনো সেই দিনগুলোর বার পুজোর (Bar Puja) কাহিনী গুলো আর বর্তমানে ময়দানের দুটো বড় ক্লাবের বার পুজোর পার্থক্যটা আকাশ পাতাল।
তখন ভোর হতে না হতেই ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের কর্মকর্তারা সবাই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়তেন কালীঘাট মন্দিরে। ভোর থেকে সদস্য সমর্থকদের মধ্যে হই হই পড়ে যেত। কর্মকর্তারা মন্দিরের দোকানে গিয়ে পান্ডাদের নিয়ে ডালা সাজাতেন। তারপর সেই ডালা নিয়ে একেবারে মায়ের দরবারে হাজির। ততক্ষণে পুজো (Bar Puja) দিতে ভক্তরাও লাইন দিতেন। অনেকের হাতেই ক্ষেরোর পাতা, ঝুড়িতে সিদ্ধিদাতা গণেশ। সময় এগোনোর সঙ্গে লাইনও বড় হতো। ময়দানের বড় ক্লাবের জন্য অবশ্য অন্য ব্যবস্থা আগেভাগেই করা থাকতো। সটান কর্মকর্তারা মায়ের কাছে পৌঁছে নতুন বছরে সাফল্য প্রার্থনা করতেন। মা- মা। এবার যেন ফুটবলের সব ট্রফি আমরা জিততে পারি মা। লিগ, শিলড, ডুরান্ড, রোভার্স সব যেন পাই মা। কেউ কেউ আবার ট্রফি জয়ের জন্য শর্ত আরোপ করত। ‘মা, অন্তত তিন-চারটে ট্রফি পেলেই জোড়া পাঁঠা দেব মা।’ পুজো দিয়ে সোজা মাঠে এসে মা কালীর সিঁদুর লাগানো হতো ক্লাবের প্রবেশ দ্বারে, বার পোস্টে। ফুল মালায় মালায় সাজানো ‘বার’এর শুদ্ধিকরণ এভাবেই করা হতো।
সভ্য সামর্থকরা ভোরবেলা থেকেই ক্লাবের বাইরে ভিড় জমাতেন। বার পুজোর (Bar Puja) সময়টাতে বর্তমান ও প্রাক্তন খেলোয়াড়রা থাকতেন। তবে বাইরে কোন টুর্নামেন্ট থাকলে বর্তমান ফুটবলারদের সবাইকে পাওয়া যেত না। এরপর বিকেল পর্যন্ত পুরো সময়টা লোকজনের আসা যাওয়া হই হুল্লোড় খাওয়া দাওয়ার বিরাট ব্যবস্থা ছিল ।ওই সময়টা বার পুজোর পিছনে একটা সত্ত্বা অনুভূত হওয়ার কারণ, এর আগে আগেই হয়ে যেত দলবদল। জার্সির রং বদলাতেন অনেক ছোট-বড় অনেক ফুটবলারই। মোহনবাগানে যেবার গৌতম সরকার, শ্যামথাপারা এলেন সেই ৭৭ এর পহেলা বৈশাখ দারুন জমে গিয়েছিল। ঐ বছর লিগে মিহির বসু ও সমরেশ চৌধুরীর গোলে ইস্টবেঙ্গল ২-০ তে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। আর আইএফএ শিল্ডে বেজেছিল শ্যামের বাঁশি। সবুজ মেরুন সভ্য সমর্থকরা শিল্ড জিতে ‘শ্যামের বাঁশি বাজাল, মোহনবাগান শিল্ড জিতল’ স্লোগান দিতে দিতে খুশির জোয়ারে ঘরে ফিরেছিলেন। তখন কলকাতার ফুটবলে দলবদল নিয়ে সভ্য সমর্থকদের মধ্যে যে উন্মাদনা ছিল তা আজ আর নেই। সভ্য সমর্থকরা এদিন ভোরে ক্লাবে আর ভিড় জমান না। বলতে গেলে আর কেই আসে না। এদিন ক্লাব গুলোতে বিশাল আয়োজন আর হয় না। খাওয়া দাওয়ার বিশাল ব্যবস্থা হয় না। সব কিছুই হয় নমো নমো করে। বলতে গেলে অতীত আর বর্তমানের পার্থক্যটা অনেক।
একসময় ইস্টবেঙ্গলে ফুটবল সচিব অজয় শ্রীমানি, যিনি ছিলেন ময়দানের প্রান। তিনি ময়দানের বার পুজো নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে বলেছিলেন, এখন আর আমি ক্লাবে যাইনা যেতেও পারিনা। কেউ ডাকেও না। ষাট সত্তর সাল পর্যন্ত বার পুজো দেখেছি। কি দারুন উন্মাদনা ছিল। এখন সেসব মনে করলে বড় কষ্ট হয়। বর্তমানে তো শুনেছি কালীঘাটে পুজো দেয়া হয়। পুরোহিত আছে, জ্যোতিষও আছে। কিন্তু সবকিছুই যেন নমো নমো করে হয়। যাক ওসব কথা। এনিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। সব ভুলে যেতে চাই।
সত্যিই সেদিনের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে ময়দান থেকে। হারিয়ে গেছে ময়দানি জৌলুস। ময়দানের বার পুজো (Bar Puja) আজও আছে ঠিকই, কিন্তু তা যেন বড়ই বেমানান।
#Bar Puja #WorshipofGoalPosts #EastBengal #Football #Kolkata #Moidan
আরও পড়ুন :
৬৪ দল নিয়ে ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনে ফিফাকে প্রস্তাব দিয়েছে কনমেবল