Breaking News

patrick patterson

এক কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারের মর্মান্তিক পরিণতি

কিন্তু কোথায় এই প্যাট্রিক প্যাটারসন? তিনি কি জীবিত আছেন? কেন তাকে নিয়ে কখনো কোন উচ্চবাচ্য হয়নি?

patrick patterson fast bowler

patrick patterson

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়ার এক টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ অলরাউন্ডার মিডিয়াম পেসার স্টিভ ওয়াহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের পর পর ৪ টি বাউন্সার দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। কাজটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, কারণ বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলাররা তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তারা বাউন্সার দেয়া শুরু করলে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টেকাই সমস্যা। স্টিভ ওয়াহর এই ঘটনাটি আমরা অনেকেই শুনেছি। ক্রিকেট মাঠে স্টিভ ওয়াহ চ্যালেঞ্জিং সাহসী প্রতিমূর্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার পরের অংশটি আমরা অনেকেই জানিনা, যার নায়ক ছিলেন প্যাটারসন। সেদিন ছিল খেলার ৪র্থ দিন। স্টিভ ওয়াহ-কাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্যাটারসন রেগেমেগে অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে সবাইকে হুমকি দিয়ে আসেন, তোকে তোকে তোকে আর তোকে সবগুলোকে কাল মাঠের মধ্যে খুন করবো বাউন্সার দিয়ে। হয়েছিলোও ঠিক তাই। প্যাটারসন একাই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়া করুণ পরাজয় বরণ করে।

Champions Trophy: অনড় পাকিস্তান-ভারত,তৈরি হয়েছে জটিল পরিস্থিতি

বছর ২ আগে শচীন টেন্ডুলকারকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনার খেলা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতি ছিল কার, শোয়েব আখতার নাকি ব্রেট লি? না, এদের কেউ নন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে শচীন জানালেন, তার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে গতিধর বোলার প্যাট্রিক প্যাটারসন (patrick patterson)! কে এই প্যাট্রিক প্যাটারসন? উপস্থিত অধিকাংশ সাংবাদিক নামটাই শুনলেন প্রথমবার।

পারিশ্রমিকে কোহলি এখন আর ভারতের শীর্ষ ক্রিকেটার নন

৮০’র দশক ও ৯০’র দশকের প্রথমদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট টিমের উইকেট রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন বর্তমান টিভি ধারাভাষ্যকার জেফ ডুজন। বলা বাহুল্য  সময়টা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তখন বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলারদের মিলনমেলা। কত প্রতিভাবান বোলার যে জাতীয় দলে সুযোগ পান নি, অথচ অন্য দেশে জন্মালে তাদের ফাস্ট বোলারের ঘাটতি কিছুটা মিটতো। এন্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট, ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি এমব্রোস, কোর্টনি ওয়ালসের মতো ইতিহাস সেরা ফাস্ট বোলারদের বিপরীতে উইকেট সামলাতে হয়েছে জেফ ডুজনকে। ডুজনকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, অসংখ্য ফাস্ট বোলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতি কার ছিল বলে মনে করেন? মার্শাল নন হোল্ডিং নন গার্নার নন, অবাক হলেও সত্যি জেফ ডুজনের মতেও শ্রেষ্ঠ ফাস্ট বোলার ছিলেন প্যাট্রিক প্যাটারসন।

শুধু শচীন কিংবা জেফ ডুজন নন, পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াদাদ, ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক আজহারউদ্দীন, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ এদের মত গ্রেট ক্রিকেটার যারা প্যাটারসনের বিপক্ষে ব্যাটিং করেছেন তারা প্রায় সকলেই বলেছেন প্যাটারসনের চেয়ে গতিধর ফাস্ট বোলার তারা দেখেননি।

কিন্তু কোথায় এই প্যাট্রিক প্যাটারসন (patrick patterson)? তিনি কি জীবিত আছেন? কেন তাকে নিয়ে কখনো কোন উচ্চবাচ্য হয়নি? প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৮ টি টেস্ট ও ৫৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই জ্যামাইকান গতিদানব হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বাদ পড়েন। তার পর বিস্ময়করভাবে তিনি যেন হারিয়ে যান। তার পুরান সতীর্থ বা পরিবারের সদস্য কেউ তার কোন খবর বলতে পারেন নি। অনেকে ভেবেছিলেন, তিনি বেঁচে নেই। কেউ কেউ বলতেন, প্যাটারসন কোন এক পাগলা গারদে আছে। কিন্তু কোথায় তা জানা নেই। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, হয়তো আমেরিকা চলে গেছেন তিনি।

কলকাতার হাওয়া গায়ে লাগতেই দিল জিতলেন পুরোদস্তুর ‘বাঙালি’ দিলজিৎ

বরাবরই মাথা গরম পাগলাটে ছিলেন প্যাটারসন (patrick patterson)। তুলনামূলক বেশি রান দিতেন, তবে মাত্র ৫১ স্ট্রাইক রেটে বোলিং করে গেছেন যা টেস্ট ক্রিকেটে এক কথায় মারাত্মক। এত কম স্ট্রাইক রেট আর কারো নেই। ব্যাটসম্যানদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন তিনি। কিন্তু জাতীয় দল থেকে বহিষ্কৃত হবার পর পাগলাটে প্যাটারসন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন। ক্রিকেট খেলার সাথে সম্পর্ক রাখেন নি, রাখেন নি পরিবার কিংবা সমাজের সাথে। অনেকটা স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন, কেউ তার খোজ নেয় নি। তার বৃদ্ধ বাবা মাও জানেন না ছেলে কোথায় আছেন, নাকি নেই!! এমন প্রতিভাবান বোলারের এভাবে হারিয়ে যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। অবশেষে অনেক খোজাখুজির পর জ্যামাইকার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০১৭ সালে তাকে খুজে পান এক ভারতীয় সাংবাদিক। কিন্তু কোথায় সেই গতিদানব প্যাটারসন? এ যে এক বুড়ো হাড্ডিসার! প্যাটারসন একা এক কক্ষের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে কোনমতে বেঁচেবর্তে আছেন। পাগল হয়ে যান নি, তবে অনেকটাই স্মৃতিভ্রষ্ট। পেটের ভাত যোগাতে হেন কাজ নেই তিনি করেন না। প্রথমে কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু যখন শুনলেন ৬ বছর ধরে এই তরুণ সাংবাদিক তাকে খুজেছেন তখন কথা বলতে রাজি হলেন।

কিন্তু কেন এই স্বেচ্ছানির্বাসন? কিছু কিছু প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। প্যাটারসন ভুলতে বসেছেন তার সোনালী অতীত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই টেস্টের কথা তিনি আর মনে করতে পারেন না। শুধু এটুকু মনে করতে পারেন অসাধারণ উত্তেজনা ছিল। ক্ষমার সুরে উপস্থিত সাংবাদিককে বলেন, ২৫ বছর হয়ে গেছে ওসব আমি এখন আর ভালো মনে করতে পারিনা। এমনকি তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গতিধর বোলার ছিলেন শুনে যেন অবাক হলেন। এসব কিছুই তার মনে নেই। তবে কথা বলতে বলতে কিছুটা মনে করার চেষ্টা করলেন। পাকিস্তানে গিয়ে জাভেদ মিয়াদাদকে আউট করেছিলেন, ভারত সফরে এসে বন্ধুত্ব হয়েছিলো আজহারউদ্দীনের সাথে। আজহারের কথা জিজ্ঞেস করলেন, ও কি এখন কোচিং করায়? আজহারের ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি ও রাজনীতিতে প্রবেশের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। টি টুয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তার কোন আইডিয়াই নেই। শচীন টেন্ডুলকারের কথা কিছু কিছু মনে আছে। তবে সে যে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান হয়ে গেছে এসব কিছুই আর তিনি জানেন না।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স (ICC Champions Trophy 2025) ট্রফিতে ভারতকে পাকিস্তানে খেলাতে চান তেজস্বী যাদব

প্যাট্রিক প্যাটারসন এমন এক সময় ক্রিকেট খেলেছেন যখন মাঠে স্পিড মিটার বসানো হতো না। হয়তো ১০০ মাইলের বেশি গতিতেই তিনি বোলিং করেছেন। আজকের মিলিয়ন ডলারের এই খেলা, একসময় এই খেলায় তেমন টাকা ছিলনা। সেজন্য হয়তো সোনার যৌবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেও যাযাবরের মতো জ্যামাইকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গতিদানবকে

Web: https://www.cloudtv.news
Facebook : https://www.facebook.com/cloud.tv24x7
x (twitter) – @cloudTV_NEWS
Youtube: @cloud.tv24x7

ad

আরও পড়ুন: