ClimateChange CloudChange
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি”—এই কবিতার মতো স্নিগ্ধ মেঘের দৃশ্য এখন আর আগের মতো নেই। বদলে যাচ্ছে মেঘের রঙ, ঘনত্ব, এমনকি আকারও (ClimateChange CloudChange)। আর এই পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে একটি গভীর সংকেত—পৃথিবীর উষ্ণায়ন।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আকাশের মেঘের গঠন ও আকারে পরিবর্তন। এই পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে, কিন্তু তার প্রভাব অত্যন্ত গভীর।
জানা গেছে, যে কোনো সময়ে পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল মেঘ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। মেঘ সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে মাটিতে অতিরিক্ত তাপ পৌঁছায় না—পৃথিবী থাকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা।
কিন্তু গত এক দশকে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিফলনের ক্ষমতাসম্পন্ন সাদা ও ঘন মেঘের পরিমাণ কমছে, এবং তার জায়গায় বাড়ছে ভাঙাচোরা, ধূসর এবং কম প্রতিফলক মেঘ। যার ফলে সূর্যের তাপ সরাসরি মাটিতে পড়ছে, এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে।
জীবাশ্ম জ্বালানির দাহ, শিল্প উৎপাদন ও পরিবহণ থেকে নির্গত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস। সেই সঙ্গে বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ছে অ্যারোসল নামে পরিচিত ক্ষুদ্র কণিকা। এইসব উপাদান মেঘের গঠন বদলে দিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ক্রিশ্চিয়ান জ্যাকব বলেন—
“মেঘ যেন এখন পৃথিবীর জলবায়ুর জন্য এক ধরনের থার্মোস্ট্যাট। কিন্তু এই থার্মোস্ট্যাটই এখন বিগড়ে যাচ্ছে।”
গবেষণা বলছে, নিরক্ষরেখার কাছাকাছি যে অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল মেঘ দেখা যেত—সেই অঞ্চলটি “Intertropical Convergence Zone” বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল—সেখানে উচ্চ প্রতিফলক মেঘ কমে যাচ্ছে। এই অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সূর্যালোকপ্রাপ্ত এলাকা, ফলে এখানকার মেঘ বদলে যাওয়া বিশ্ব তাপমাত্রার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে, মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে ধূসর এবং ছেঁড়াখোঁড়া মেঘ, যা তাপ প্রতিফলনের ক্ষেত্রে কম কার্যকরী। ফলে মেরু অঞ্চলেও দ্রুত গলছে বরফ।
আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভেঙে যেতে পারে সব তাপমাত্রা রেকর্ড: ডব্লিউএমওর সতর্কবার্তা
পৃথিবীর গভীরে খোঁজ মিলেছে হিমালয়ের চেয়ে শত গুণ বড় দুটি পর্বত!
এমন মেঘের অঞ্চল ছোট হয়ে গেলে:
সূর্যালোক সরাসরি পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছবে
পৃথিবী আরও বেশি তাপ শোষণ করবে
সমুদ্রের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়বে
বরফ গলবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে
বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যেতে পারে
চরম আবহাওয়া (খরা, বন্যা) ঘটবে বারবার
এই পরিবর্তন এখন এক চক্রে পরিণত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক ভাষায়, একে বলা হচ্ছে “Positive Feedback Loop”। মানে একবার প্রক্রিয়া শুরু হলে তা আর সহজে থামে না। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক।
সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত দশকে প্রত্যাশার তুলনায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। সেইসঙ্গে, মেঘের পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন—এই প্রক্রিয়া যদি অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর আবহাওয়া এক ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
আরও পড়ুন :
নিজের কলেজে ‘ধর্ষিতা’ ছাত্রী। ‘ধর্ষক’ পূর্বপরিচিত এবং ছাত্র রাজনীতিতে দু’জনে ‘সহযোদ্ধা
তুরস্কে ভয়াবহ দাবানল: ইজমিরসহ একাধিক প্রদেশে আগুন, ঘরবাড়ি ফেলে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা