DecliningBirthRate
ক্লাউড টিভি ডেস্ক | ১১ জুন ২০২৫: অর্থনৈতিক সংকট, পর্যাপ্ত সময় না থাকা, উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব ও বন্ধ্যাত্বের মতো কারণে বিশ্বে সন্তান জন্মহার নজিরবিহীনভাবে কমেছে (DecliningBirthRate)। বিশ্বের ১৪টি জনবহুল দেশে গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য সামনে আনল জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)।এই প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে এমন ১৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ভারত, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
UNFPA-এর নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া ক্যানেম বলেন, “বিশ্ব এখন এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে চাইলেও মানুষ ইচ্ছেমতো সন্তান নিতে পারছেন না। পরিবার গড়ার মৌলিক অধিকার অনেকের কাছেই অধরা থেকে যাচ্ছে।”
১৪টি দেশের ১৪ হাজার মানুষের ওপর চালানো জরিপে প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা অন্তত দুই বা তার বেশি সন্তান চান, কিন্তু বাস্তবিক কারণে তারা তা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
Adopted Daughter জন্মের পরিচয় খুঁজে দেখেন—ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেই ছিলেন বাবা
এর ফলে দেখা যাচ্ছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল—সব ধরনের দেশেই জন্মহার উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জনসংখ্যা কাঠামো এবং অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জন্মহার হ্রাসের পিছনে একাধিক কারণ জড়িত:
অর্থনৈতিক সংকট: জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, চাকরির অনিশ্চয়তা, শিশুর শিক্ষাপাঠসহ আনুষঙ্গিক খরচে পরিবার পরিকল্পনায় মানুষ পিছিয়ে পড়ছে।
সামাজিক পরিবর্তন: দাম্পত্য জীবনে বিলম্ব, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে জটিলতা, এবং সঙ্গীর অনুপলব্ধতা মানুষকে দেরিতে বা কম সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
বন্ধ্যাত্ব ও স্বাস্থ্য সমস্যা: বন্ধ্যাত্ব এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যাও অন্যতম বড় কারণ। অনেকেই প্রাকৃতিকভাবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন।
ক্যারিয়ার ও সময়ের অভাব: আধুনিক কর্মব্যবস্থা, দীর্ঘ সময় কাজের চাপ—বিশেষ করে নারীদের পেশাগত উন্নতির সঙ্গে সন্তান নেবার পরিকল্পনা ব্যাহত করছে।
যদিও এটি একটি পাইলট জরিপ, তবে এতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন স্তরের ও বয়সের মানুষের অভিমত বিশ্বজুড়ে এক অভিন্ন সংকেত দিচ্ছে—মানুষ সন্তান চায়, কিন্তু পরিস্থিতি তাকে তা করতে দিচ্ছে না।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, “জাতিসংঘ এতদিন এমন পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করত যারা অতিরিক্ত সন্তান নিচ্ছে, এখন প্রথমবারের মতো তারা বলছে—অনেকেই সন্তান নিতে পারছে না। এটা একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।”
এই রিপোর্টের ভিত্তিতে UNFPA ঘোষণা করেছে, চলতি বছরের শেষভাগে আরও ৫০টি দেশে বৃহৎ পরিসরে জরিপ চালানো হবে। তখন আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে কোন কোন অঞ্চল সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে এবং কী ধরনের নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।জন্মহার কমে যাওয়া শুধু জনসংখ্যা নয়, বরং একটি দেশের অর্থনীতি, কর্মক্ষমতা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করতে পারে।
জাতিসংঘের এই রিপোর্ট সময়োচিত সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষকরা। এখন প্রয়োজন, সরকার ও সমাজের সচেতনতা এবং সমন্বিত উদ্যোগ—যাতে প্রত্যেকে নিজের মতো করে পরিবার গড়ার সুযোগ পায়, বাধা নয়।
আরও পড়ুন :
রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ চাকরি হারানো শিক্ষকরা: “জীবনের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়”