Ukraine Parubiy murder suspect arrested 2025
ক্লাউড টিভি ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন এক গভীর শোক ও আতঙ্কের মধ্যে নিমজ্জিত। গত শনিবার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে প্রাক্তন সংসদ স্পিকার আন্দ্রি পারুবিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তাঁর এই নৃশংস মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই ঘোষণা করেন যে এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি ইতিমধ্যেই প্রাথমিকভাবে অপরাধ স্বীকার করেছেন।
জেলেনস্কি তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে জানান, হত্যার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করে। পরে খমেলনিৎসকি অঞ্চলে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড হঠাৎ কোনো উত্তেজনার কারণে ঘটেনি, বরং তা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। তারা বলেছে—ভুক্তভোগীর দৈনন্দিন চলাফেরা নজরদারিতে রাখা হয়েছিল, একটি নির্দিষ্ট রুট তৈরি করা হয়েছিল এবং পালানোর পরিকল্পনাও আগে থেকে সাজানো হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি বলেছেন, “এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের সব দিক উদঘাটন করা হবে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দ্রুত ও সমন্বিত কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাই।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে এ ধরনের অপরাধ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে তা সরকার গভীরভাবে উপলব্ধি করছে।
আন্দ্রি পারুবি ছিলেন ইউক্রেনীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তিনি ২০১৩–১৪ সালের ইউরোমাইদান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, যখন ইউক্রেনীয় জনগণ রাস্তায় নেমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং তৎকালীন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পারুবি সেই আন্দোলনের কৌশলগত সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে ইউক্রেন, রাশিয়া কি সম্মত হবে?
এরপর তিনি সংসদে দ্রুত উত্থান ঘটান এবং ২০১৬ সালে সংসদ স্পিকারের আসনে বসেন। ২০১৯ পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ইউক্রেন সংসদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস হয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা নীতি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন–ন্যাটো ঘনিষ্ঠতার উদ্যোগ। ফলে, তাঁর মৃত্যু শুধু একজন রাজনীতিবিদের মৃত্যু নয়, বরং এক প্রতীকী চরিত্রের প্রস্থান, যা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
তবে তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। কী উদ্দেশ্যে পারুবিকে হত্যা করা হলো? এটি কি শুধুই ব্যক্তিগত শত্রুতার ফলাফল, নাকি এর পেছনে আরও বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে? ইউক্রেনের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে নাড়িয়ে দেয় না, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো নেতারা ইতিমধ্যেই পারুবির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ব্রাসেলস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আন্দ্রি পারুবি ছিলেন ইউক্রেনের ইউরোপীয় অভিযাত্রার এক দৃঢ় কণ্ঠস্বর। তাঁর মৃত্যু আমাদের সবার জন্য ক্ষতির।” একইসাথে পশ্চিমা কূটনীতিকরা তদন্তের পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এরই মাঝে এই ধরনের রাজনৈতিক হত্যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হলে দেশের মনোবল দুর্বল হতে পারে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
আন্দ্রি পারুবির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ইউক্রেন এখন নতুন এক ধাক্কার সম্মুখীন। যদিও দ্রুত গ্রেপ্তার এবং রাষ্ট্রপতির আশ্বাস পরিস্থিতিকে খানিকটা স্থিতিশীল করেছে, তবুও এই ঘটনা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধকালীন এই হত্যাকাণ্ড ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
আরও পড়ুন :
মোদি সমীক্ষা ২০২৫ : সমর্থন কমলেও সমীক্ষায় এগিয়ে মোদি
সাড়ে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হলো ব্রাডম্যানের ব্যাগি গ্রিন টুপি