Breaking News

GazaEducationCrisis

ইজরায়েলি আগ্রাসনে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে: স্কুলছুট প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী

বিকল্প উপায়ে চালু হচ্ছে তাঁবু ও মাঠে ক্লাস, তবু ৩.৫ লাখ শিক্ষার্থী একেবারে শিক্ষা বঞ্চিত

GazaEducationCrisis: Impact on Students and Schools %%page%% %%sep%% %%sitename%%

GazaEducationCrisis

গাজা, ১ জুন ২০২৫ – অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা ও সামরিক অভিযানে গাজা উপত্যকার শিক্ষাব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের মুখে (GazaEducationCrisis) পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সতর্কতা এবং গাজা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, অঞ্চলটির প্রায় ৭ লাখ ৮৫ হাজার স্কুলশিক্ষার্থী এখন মৌলিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত।

গাজার উপ-শিক্ষামন্ত্রী ড. খালেদ আবু আল-নাদা একে ‘গাজার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “আজ গাজায় কেউই আর নিরাপদ নয় – না স্কুল, না শিক্ষক, না ছাত্রছাত্রী। ইসরায়েল যেভাবে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করারই একটি ষড়যন্ত্র।”

গাজার প্রায় সব স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ স্কুল আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২১২টি স্কুল সরাসরি বিমান হামলার শিকার হয়েছে, এবং আরও ২৮২টি আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এসব স্কুলে এক সময় প্রায় ৫ লাখ ৩ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৮ হাজার ৯০০ জন শিক্ষক নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও। গাজার ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪টি পুরোপুরি ধ্বংস এবং ১০টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় খান ইউনিসে ইসলামিক ইউনিভার্সিটির একটি শাখা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকটাই এখন পরিণত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে, যেখানে বসবাস করছে সহায়হীন বাস্তুচ্যুত পরিবার। কিন্তু তারাও নিরাপদ নয় – আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকেও লক্ষ্য করে চলছে বোমাবর্ষণ।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের হাতছানি—বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ: ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজায় শিক্ষার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেক শিশু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে না

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ২ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী এবং ২৬১ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। শুধু মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নয়, এতে পুরো শিক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার অনেক শিশুর এখন আর ফিরে যাওয়ার মতো কোনো স্কুলই অবশিষ্ট নেই।

সঙ্কটকালে শিক্ষা থেমে থাকলেও গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বিকল্প উপায়ে শিক্ষার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁবুতে, উন্মুক্ত মাঠে এবং কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তবে চলমান সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের এক বা একাধিক শিক্ষাবর্ষ সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

৩.৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে কোনো ধরনের পাঠদান পাচ্ছে না, যা গাজার সাক্ষরতা ও দীর্ঘমেয়াদী মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ভয়ানক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

গাজার বাস্তুচ্যুত একজন পিতা মাহের বলেন, “আমার সন্তান কয়েকদিন আগে বলেছে, আমি খেতে চাই, আমি খেলতে চাই না – আমি স্কুলে যেতে চাই। ও শুধু তার পুরনো জীবন ফিরে চায়।”

এই এক টুকরো চাওয়া, একটি শিশুর সরল আকাঙ্ক্ষা, আসলে গোটা গাজার শিশুদের মনের কথা। যুদ্ধের ভয়াবহতা, খাদ্য ও চিকিৎসার সংকটের মাঝেও তারা স্বপ্ন দেখে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার।

গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “শিক্ষা রক্ষা করা শুধু নীতিগত দায়িত্ব নয়, এটি একটি মানবিক কর্তব্য। জাতি গঠনের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য। ইসরায়েলের এই পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ শুধু ভবন নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎকে লক্ষ্য করছে।”

তারা আরব ও ইসলামি বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, গাজার শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকেও জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে শিক্ষা আবার গাজায় ফিরে আসতে পারে।

আরও পড়ুন :

মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর ভয়ে ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করছেন মমতা : অমিত শাহ

মায়ানমারে মার্কিন ‘ছায়াযুদ্ধ’ পরিকল্পনা: উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ad

আরও পড়ুন: