BarunBiswas BengalJusticeCrisis
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ঘটনার সূত্রপাত ২০০০ সালে। গাইঘাটার সুটিয়ায় মহিলাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তৈরি করা হয়েছিল ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’। সুটিয়ার সেই প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন মাস্টারমশাই বরুণ বিশ্বাস। কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করতেন। প্রতিদিন গ্রাম থেকে কলকাতায় যেতেন। নিয়মিত ক্লাস করিয়ে আবার রাতে ফিরতেন গ্রামে। সুটিয়ার ধর্ষণের মামলায় অন্যতম অভিযোগকারী ও সাক্ষী ছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামের এই মাস্টারমশাই (BarunBiswas BengalJusticeCrisis)।
শোনা যায়, পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বরুণ বিশ্বাসকে। কিন্তু কোনওকিছুই টলাতে পারেনি তাঁকে। সময় যত এগিয়েছে, প্রতিবাদের সুর আরও চড়িয়েছেন। লাগাতার হুমকির মুখেই স্কুলে পড়াতে যাওয়া বন্ধ করেননি। নিয়মিত ক্লাস নিতে গিয়েছেন মিত্র ইনস্টিটিউশনে। গোবরডাঙা-শিয়ালদহ নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করতেন।
ইংল্যান্ডে কোহলির যে রেকর্ড ভাঙা সহজ নয়,তবে নতুন যুগের সূচনাটা ভালোই হল
এদিকে সুটিয়ার ধর্ষণ মামলা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ততদিনে। অন্যতম অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী-সহ আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সুশান্তকে রাখা হয়েছিল দমদম সেন্ট্রাল জেলে।
এরপর ২০১২ সালের ৫ জুলাই। আর পাঁচটা দিনের মতো সেদিনও স্কুল থেকেই ফিরছিলেন বরুণ। রাত হয়ে এসেছিল। গোবরডাঙা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। সেই সময়েই গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরের বাইরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে তাঁকে লক্ষ্য করে। সেখানেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। অভিযোগ, জেলে বসেই সুটিয়ার মাস্টারমশাই বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ছক কষেছিল সুশান্ত।
বরুণ বিশ্বাসের উপর সেই হামলা তখন টলিয়ে দিয়েছিল গোটা বাংলাকে। কলকাতার রাজপথ উত্তাল হয়েছিল। পথে নেমেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। কিন্তু এতগুলি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও চাপা ক্ষোভ সুটিয়ায়। বরুণকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগে এক নাবালকের সাজা হয়েছে বটে, কিন্তু কে বা কারা ওই নাবালককে গুলি চালাতে বলেছিল? বরুণের উপর হামলার নেপথ্যে কারা ছিল? সেসব ভাবতে গেলে সুটিয়ার প্রবীণ মুখগুলো কেমন বিবর্ণ হয়ে ওঠে। অনেকেই ভাবেন, আসল দোষীদের সাজা হলেও, জীবদ্দশায় হয়ত তাঁরা সেটা আর দেখে যেতে পারবেন না।
আজ, ১৩ বছর পর, যখন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেই সময়ের ঘটনার স্মৃতি ও বার্তার গুরুত্ব আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেছে।বরুণ বিশ্বাসের আন্দোলনের মূলে ছিল নারীর প্রতি হিংস্রতার বিরোধিতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের জোরালো দাবি। আর.জি. কর ও দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজের ঘটনাগুলিতে ইতিহাসের সেই বার্তার সত্যতা আবারও প্রমাণিত হচ্ছে। প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক প্রভাব যেখানে নারীর সুরক্ষায় অন্তরায় হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত—সেখানে বরুণ বিশ্বাস আমাদের সতর্ক করেছিলেন ঠিক এক যুগ আগে।
আরও পড়ুন :
দিল্লি হাই কোর্টে জ্যাকলিন ফার্নান্দেজের আবেদন খারিজ, ২০০ কোটি মানি লন্ডারিং মামলায় ED র মামলা চলবে
ইতিহাস গড়ল Nvidia : বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি