Chandannagar Jagadhatri Uninterrupted power
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : হুগলির চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এই শহরের পরিচয় ও ঐতিহ্য। তাই প্রতিবছর বিসর্জনের দিনে শহরজুড়ে জমে ওঠে আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম এবং শোভাযাত্রার রঙিন পরিবেশ। কিন্তু বিগত বহু বছর ধরে ভাসানের দিন সকালে থেকে দুপুর অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার প্রচলন ছিল। প্রধান কারণ, বিশাল প্রতিমা বহনের ট্রাক ও আলোকসজ্জার তার যাতে উপরে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনে ছুঁয়ে দুর্ঘটনা না ঘটায়। ফলে বহুবার পৌরবাসীদের অসুবিধা হয়।
তবে এ বছর পরিস্থিতি বদলেছে। কারণ রাজ্য সরকার ও বিদ্যুৎ দফতরের উদ্যোগে ১২০ কোটি টাকার একটি বৃহৎ বিদ্যুৎ আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ লাইন ভূগর্ভস্থ করা হয়েছে। এর ফলে ওভারহেড তারের সমস্যা অনেকাংশে কমেছে এবং প্রথমবার বিসর্জনের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চন্দননগরজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
মোকামায় জন সুরাজের কর্মীর হত্যাকাণ্ডে উত্তাল বিহার, জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিংহ গ্রেফতার
জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগরের শোভাযাত্রা রাজ্যজুড়ে বিখ্যাত। হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন এবং পর্যটকদের ঢল নামে শহরে। কিন্তু বিপুল ভিড় ও শোভাযাত্রার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকত। যে কারণে অতীত বছরে নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হতো।
তবে শহরের নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং পুজো কমিটিগুলির দীর্ঘদিনের দাবি ছিল— যাতে বিসর্জন উৎসবে লোডশেডিং না করতে হয়। শেষমেশ সেই দাবি পূরণ হলো। গুরুত্বপূর্ণ রুট যেমন— স্ট্যান্ড রোড, গুরুতলায়, শ্রীরামপুর রোড সহ বহু অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ কেবল বসানো হয়। এর পাশাপাশি পুরনো খুঁটি ও তারও সরানো হয়েছে। তাই এবার প্রতিমা বহনকারী বড় ট্রাক ও আলোর কাঠামোর জন্য কোনো বাধা হয়নি।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ও বিদ্যুৎ দফতর যৌথভাবে নজরদারি করেছে। তাছাড়া, জরুরি পরিস্থিতির জন্য দ্রুত প্রতিক্রিয়া দলও রাখা হয়েছিল। যদিও কোনো বড় সমস্যা দেখা যায়নি। ফলে উৎসব নিঃশব্দে এবং নিরাপদে সম্পন্ন হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি কেবল উৎসবের প্রয়োজনে নয়, বরং শহরের বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে উন্নত করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ তার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছ্বসিত। একজন দোকানদার জানান, “প্রতিবছর এই দিনে আমাদের ব্যবসা ক্ষতি হত। বিদ্যুৎ না থাকায় দোকান বন্ধ রাখতে হতো। এবার সারাদিন কাজ করতে পেরেছি।”
একজন বাসিন্দা বলেন, “জগদ্ধাত্রীর দিনে লোডশেডিং চন্দননগরের বার্ষিক দুঃখ হয়ে গিয়েছিল। এবার সেই অভ্যাস ভাঙল।”
আরও এক স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী জানান, “আলোকসজ্জা ছিল দুর্দান্ত। বিদ্যুৎ থাকায় পরিবেশ আরও সুন্দর লাগছিল। ভিড়ও সামলানো সহজ হয়েছে।”
যদিও প্রকল্প সফলভাবে শুরু হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। ভূগর্ভস্থ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামতি জটিল হয়। তাই নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত নজরদারি প্রয়োজন।
এছাড়া প্রশাসন জানায়, ভবিষ্যতে এই শহরকে স্মার্ট-গ্রিডে পরিণত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আরও আধুনিকতা আসবে এবং উৎসবের সময় বিদ্যুৎ-সঙ্কটের কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী বিসর্জনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার যুগ শেষ। প্রশাসন, বিদ্যুৎ দফতর ও নাগরিকদের সহমতের ফলেই এই সাফল্য। এবারকার উৎসব প্রমাণ করল— উপযুক্ত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ হলে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলন ঘটানো সম্ভব। এখন অপেক্ষা— ভবিষ্যতে এই মডেল অন্য শহরেও প্রয়োগ হবে কি না।
আরও পড়ুন :
লন্ডনে ট্রেনের মধ্যে ছুরি নিয়ে হামলা : ঘটনাস্থলেই গ্রেফতার, সন্ত্রাসবাদ নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ