DighaRathYatra
দিঘা | ক্লাউড টিভি : পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রতট শহর দিঘা এবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রথযাত্রার (DighaRathYatra) স্বাদ পেতে চলেছে। নতুন জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার পর এটাই হতে চলেছে প্রথম রথযাত্রা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উৎসবকে ঘিরে সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বৃহস্পতিবার দিঘায় যাওয়ার কথা থাকলেও, শেষমেশ বুধবার (২৬ জুন) বিকেলেই তিনি সেখানে রওনা হচ্ছেন।
এই সিদ্ধান্ত শুধু উৎসবের তাৎপর্য নয়, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সংবেদনশীলতার ইঙ্গিত দেয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই রথযাত্রায় প্রায় আড়াই লক্ষ ভক্ত সমাগম হতে পারে। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
পূরীর আদলে দিঘাতেও জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি পৃথক রথ তৈরি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সোনার ঝাঁটা দিয়ে রথযাত্রার আগের দিন রাস্তা পরিস্কার করবেন, যা রথযাত্রা উপলক্ষে একটি শুভ ও ঐতিহ্যবাহী রীতি। তারপর তিনি রশি ধরে রথ টানার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করবেন।
জগন্নাথ মন্দিরের স্থাপনা ও দিঘা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই উৎসব রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে মন্দিরের আশেপাশের এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক পরিস্কারের কাজ, রং-তুলির ছোঁয়ায় সাজছে দিঘা।
দিঘায় প্রশাসন এমন একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগে কোনও ধর্মীয় উৎসবে দেখা যায়নি। রথযাত্রা উপলক্ষে:
১৮০০টি টোটো গাড়িকে লাইসেন্সপ্রাপ্তভাবে ঘোরাফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে ৯০০টি করে পালা করে চলবে।
রথযাত্রার দিন অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড বসানো হয়েছে হেলিপ্যাড সংলগ্ন মাঠে, যাতে প্রধান রাস্তায় ভিড়ের চাপ না পড়ে।
প্রতিটি প্রবেশ ও নির্গমন পথেই মোতায়েন থাকছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী, বিশেষত রথের সামনে ও দুই পাশে।
ভক্তদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক, স্বাস্থ্যকর্মী ও দমকল বাহিনী।
মহিলা ভক্তদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রাজ্যের পাঁচজন মন্ত্রীকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে দিঘা সফরে পাঠানো হচ্ছে। কারও দায়িত্ব পরিবহণ, কারও আইনশৃঙ্খলা, আবার কারও জনসংযোগ। নবান্ন থেকে সরাসরি মনিটর করা হচ্ছে গোটা পরিকল্পনা।
মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে প্রতিটি মন্ত্রীর হাতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব—যাতে রথযাত্রার সময় কোনও বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
ISKCON, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রামকৃষ্ণ মিশনসহ নানা ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। এই উৎসব যাতে সবার অংশগ্রহণে হয়ে ওঠে “সম্প্রীতির উৎসব”, সেদিকেই লক্ষ্য প্রশাসনের। রথযাত্রার দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশ্রাম ও চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ইতিমধ্যেই ‘স্নানযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়ি থেকে ফলমূল পাঠিয়েছেন এই উৎসবের জন্য, যা তাঁর ব্যক্তিগত নিষ্ঠারও প্রতীক।
দীঘায় মহাযজ্ঞে পূর্ণাহুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আজ সন্ধেয় ফুলের শয্যায় শোয়ানো হবে জগন্নাথ বিগ্রহ
জগন্নাথ মন্দির চালু হওয়ার পর মাত্র ১৫ দিনেই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ দিঘা ঘুরে গেছেন। এই রথযাত্রা উপলক্ষে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “দিঘা শুধু সমুদ্র নয়, এখন হবে ভক্তির স্থান। পর্যটন ও তীর্থযাত্রার সংমিশ্রণে এই জায়গা রাজ্যের গর্ব হয়ে উঠবে।”
দিঘার এই প্রথম রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং তা রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতা, মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি সম্পৃক্ততা, এবং রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যেরও প্রতীক। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেভাবে গোটা প্রস্তুতি পর্ব এগোচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা।
আরও পড়ুন :
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ভারতের ‘কিন্তুর’ উঠে এল কেন? খোমেনির শিকড় খুঁজে পাওয়া গেল উত্তরপ্রদেশে
“রাজ্যের স্কুলে বাধ্যতামূলক মুখ্যমন্ত্রীর বই! সাহিত্য না প্রচার? শিক্ষা মহলে বিতর্ক তুঙ্গে”