Malda Road Accident HS Students
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : আজ বুধবার ভোরে মালদহ জেলায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে প্রাণ হারালেন দুই তরতাজা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতগামী একটি পিকআপ ভ্যান ধাক্কা মারে তাদের বাইকে, এবং সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় দুই ছাত্রের। ফলে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া, আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে।
মৃত দুই ছাত্রের নাম তন্ময় প্রামাণিক ও মহম্মদ রেহান। তাদের বাড়ি মালদহের পুখুরিয়া থানার অন্তর্গত শ্রীপুর বল্লভপুর গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারের ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। তারা সামসী এগ্রিল হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন, এবং পরীক্ষার জন্য যাচ্ছিলেন রতুয়া হাইস্কুলে।
দু’জন বন্ধু বাইকে রওনা দেন সকাল সকাল। তবে সামসী মতিগঞ্জ পার হয়ে কিছুদূর যেতেই বিপর্যয় নেমে আসে। রতুয়ার দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান সরাসরি ধাক্কা মারে তাদের বাইকে। ধাক্কার পর বাইক নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং রাস্তার উপর ছিটকে পড়েন দুই ছাত্র। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তন্ময় ও রেহানের।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন দুর্ঘটনাস্থলে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। অনেকেই অভিযোগ করেন, ওই রাস্তায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো রোজকার ঘটনা। ফলে, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে চলেছে।
সামসী ফাঁড়ির পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা মৃতদেহ উদ্ধার করে সামসী গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠায়। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার পর পিকআপ ভ্যান ও তার চালককে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মালদহের শিক্ষামহলে। পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য সহপাঠীরা খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্কুল শিক্ষক ও পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তন্ময় ও রেহান দু’জনেই পড়াশোনায় মনোযোগী ও ভদ্র স্বভাবের ছাত্র ছিলেন। তাদের মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, সমগ্র বিদ্যালয় পরিবারই শোকে স্তব্ধ।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিবারগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। তবে মৃতদের আত্মীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, প্রশাসন রাস্তায় পর্যাপ্ত নজরদারি চালায়নি। গ্রামীণ রাস্তায় গতিরোধক বা সিসিটিভি না থাকায় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
পুত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ির পথে ফেরার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পিতা
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে শুধু পুলিশের কড়া নজরদারি নয়, সাধারণ মানুষেরও সচেতনতা দরকার। অতিরিক্ত গতি এবং অবহেলাই বেশিরভাগ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সময় এসেছে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের।
তবে সবশেষে, এই দুর্ঘটনায় দুই কিশোর প্রাণ হারানোয় আবারও প্রশ্ন উঠেছে—পরীক্ষার দিনে এত অল্প বয়সী প্রাণ হারাতে হলো কেন? একদিকে স্কুল ও পরিবার হারালো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে রাস্তার বেপরোয়া গতি কেড়ে নিল দুটি মায়ের কোলের ধন।
অতএব, মালদহের এই দুর্ঘটনা শুধু একটি খবর নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা। দ্রুতগতির বিপদ এবং আইন অমান্য করার প্রবণতা না রোধ হলে ভবিষ্যতে আরও কত তাজা প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে, সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে।
আরও পড়ুন :
“ঘনিষ্ঠ বন্ধু, স্বাভাবিক অংশীদার”: ট্যারিফ বিরোধের মাঝেই মোদি-ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনায় আশার সুর
এশিয়া কাপের প্রাইজমানি দ্বিগুণ, চ্যাম্পিয়ন হলে ভারত পাবে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা