উত্তরবঙ্গ বন্যা শুভেন্দু অধিকারী খগেন মুর্মু হামলা
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বহু এলাকা জলমগ্ন। নদীর জল বিপদসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন কার্যত থমকে গেছে। এর মধ্যেই সামনে এসেছে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর উপর হামলার ঘটনা।
বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করতে যাওয়ার পথে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের হাতে মার খেয়েছেন তিনি — এমন অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে বিরোধীদের কোনও গণতান্ত্রিক অধিকার অবশিষ্ট নেই।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “উত্তরবঙ্গ আজ বন্যায় বিপর্যস্ত, আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো আর উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। খগেন মুর্মুর উপর হামলা প্রমাণ করে তৃণমূলের সন্ত্রাস চলছে পুরোদমে।” তিনি আরও বলেন, “যে রাজ্যে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোও অপরাধ, সেখানে গণতন্ত্রের অবস্থা বোঝাই যায়। বিজেপি এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে। আমরা উত্তরবঙ্গের প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করব।”
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিজেপি উত্তরবঙ্গ সংগঠন ইতিমধ্যে একটি তদন্ত দল পাঠিয়েছে আক্রান্ত এলাকার দিকে। তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে রাজ্য নেতৃত্বকে।
অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি, এই হামলার অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে, বিজেপি নেতারা উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। তারা প্রশাসনের কাজে বাধা দিচ্ছেন।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নদীর জল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের তৎপরতা খুবই সীমিত। খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও পানীয় জলের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। তবুও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দোষারোপের রাজনীতি চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান এবং অনিয়ন্ত্রিত জলাধার ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি বছরই এই অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ে। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। বিজেপি চাইছে — রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হোক।”তিনি আরও মন্তব্য করেন, “খগেন মুর্মুর মতো জনপ্রতিনিধির ওপর হামলা প্রমাণ করে যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। এটা শুধু একজন সাংসদের ওপর হামলা নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।”
জগদ্দলে প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং-এর বাড়ির সামনে বোমা ও গুলি চালালো দুষ্কৃতীরা
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যপালকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। দলটি দাবি করেছে, দ্রুত প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হোক এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক।এদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে — পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই সাহায্য এখনো যথেষ্ট নয়।
উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন একটাই আশা করছে — রাজনৈতিক লড়াই বাদ দিয়ে প্রশাসন ও সব দল একত্রে কাজ করুক। কারণ, বন্যা এখন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি মানবিক সংকটেও পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন :
সির ক্রিক বিরোধ কি ? ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পুরনো ক্ষত আবারও সামনে