ParthaChatterjee BailOrder
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত “ক্যাশ ফর জবস” কেলেঙ্কারি মামলায় অবশেষে বড় স্বস্তি পেলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেছে। যদিও তিনি এখনও জেলেই থাকবেন, কারণ একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসে। অভিযোগ ওঠে, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ নিয়োগ করা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে, এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
পার্থের বিরুদ্ধে এবার রাজসাক্ষী হচ্ছেন তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য
২০২২ সালের জুলাই মাসে Enforcement Directorate (ED) হানা দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ₹২১.৯০ কোটি নগদ টাকা ও ₹৭৬ লক্ষ টাকার গয়না উদ্ধার করে। এরপরই দু’জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন অবস্থায় জেলবন্দি আছেন।
মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার কারণে সুপ্রিম কোর্টে পার্থর আইনজীবীরা আবেদন করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল—চার্জশিট দাখিল ও বিচারপ্রক্রিয়া এগোয়নি, অথচ অভিযুক্ত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (Article 21) অনুযায়ী, “ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার” লঙ্ঘিত হতে পারে না। আদালতও মনে করে, এত দীর্ঘ সময় ধরে বিচার না হয়ে কাউকে জেলে রাখা মানেই কার্যত তাকে সাজার মতো ভোগান্তি দেওয়া। সেই যুক্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট শর্তসাপেক্ষ জামিন মঞ্জুর করে।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন পেলেও কিছু কঠোর শর্ত মানতে হবে—
তিনি কোনোভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
কোনো সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে জামিন বাতিল হবে।
প্রতিটি শুনানিতে তাঁকে আদালতে হাজির থাকতে হবে।
চার্জশিট দাখিল ও সাক্ষ্যগ্রহণ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন না হলে বিচার বিলম্বিত হবে না।
তিনি জামিনে মুক্ত হলেও, অন্য মামলার কারণে জেল থেকে বের হতে পারবেন না।
টিএমসি এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “আইন তার নিজের পথে চলেছে। আমরা সবসময় বলেছি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় আদালতের রায়ে ন্যায্য বিচার পাবেন।”
অন্যদিকে, বিজেপি কটাক্ষ করেছে— “বিচার এখনও শেষ হয়নি। দুর্নীতির পাহাড় চাপা পড়ে থাকবে না, সবকিছুর সত্য একদিন প্রকাশ্যে আসবেই।”
যদিও জামিন মঞ্জুর হয়েছে, তবুও পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবিলম্বে মুক্ত হতে পারছেন না। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে ED ও CBI-এর আরও কয়েকটি মামলা চলমান। বিশেষ করে, নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন মামলায় তিনি এখনো অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত।
এই কেলেঙ্কারি শুধু আদালতকক্ষেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও তীব্র আলোড়ন তুলেছিল। তৃণমূল সরকারের ভাবমূর্তিতে বড়সড় আঘাত হেনেছিল এই ঘটনা। নির্বাচনী সময়ে বিরোধীরা এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারকে চাপে রেখেছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের জামিনের সিদ্ধান্তে একদিকে টিএমসি খানিকটা স্বস্তি পেলেও, রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক যে আরও বাড়বে তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুন :
ডিএমকে এপিজে আব্দুল কালামকে সমর্থন করেনি, কিন্তু বিজেপি আজ একজন তামিল নেতাকে এই সম্মান দিল
খরার সংকটে ব্রিটেন: জল বাঁচাতে ইমেইল-ফটো ডিলিট করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা