Pulak Bandopadhyay
কলকাতা, ২ মে ২০২৫ (ক্লাউড টিভি): কলকাতার ঘরোয়া বারান্দা, বিকেলের চায়ের কাপ, ছেঁড়া ডায়েরির পাতায় প্রেমের খসড়া—এই সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন একজন মানুষ। নাম—পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় (Pulak Bandopadhyay)। আজ ২ মে, তাঁর জন্মদিন। বাংলা গানের ইতিহাসে তিনি এমন এক নাম, যার গান শুনলেই বুকের ভেতর একটা ‘কিছু’ নড়েচড়ে ওঠে। তিনি ছিলেন গানের গল্পকার। প্রেম, বিরহ, নস্টালজিয়া, শহরের জীবন—সব মিশে থাকে তাঁর শব্দে।
যে শহরের ঘরে ঘরে বাজে তাঁর গান
পুলকবাবুর (Pulak Bandopadhyay) লেখা গান মানে যেন পুরনো দিনের ফিল্টার বসানো কোনো সাউন্ডট্র্যাক। মনে হয়, একটা অলস দুপুরে দাদুর রেডিও চালিয়ে রেখেছি, আর ভেসে আসছে—
“এই পথ যদি না শেষ হয়…”
শুধু গান নয়, একটা সময়, একটা অনুভব।
তিনি সেইসব গানের কারিগর, যেগুলো বাঙালির শোক, সুখ, হাহাকার আর ছোট ছোট আনন্দের এক্সপ্রেশন।
১৯৩১ সালের ২ মে, কলকাতার উত্তরাংশে জন্ম পুলকের(Pulak Bandopadhyay)। ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল। পড়াশোনা স্কটিশ চার্চ কলেজে। পরে সরকারি চাকরিতেও যোগ দেন, কিন্তু মন পড়ে থাকত ছন্দে, কথায়, গানের লাইনে। সত্তরের দশকে সেই মনই তাঁকে নিয়ে যায় বাংলা সিনেমার গানের কেন্দ্রে।
“বাংলায় থাকছ, বাংলায় চাকরি করছ, বাংলায় পয়সা রোজগার করছ, আর বলছ বাংলা গান শুনবে না?” : ইমন
ষাট থেকে আশি—এই তিন দশকজুড়ে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম শক্তিশালী গীতিকার। তাঁর লেখা গান যেমন ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল, তেমনি ছিল শিল্পগত মানেও সমৃদ্ধ। পরিচালকেরা জানতেন—গানের মধ্যে নাটক খুঁজতে হলে পুলকের কাছে যেতে হবে।
তাঁর লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি, শ্যামল মিত্র থেকে লতা মঙ্গেশকর পর্যন্ত। সুর দিয়েছেন আর.ডি. বর্মন, হেমন্ত, অপূর্ব লাহিড়ী প্রমুখ।
কিছু অমর গান
“এই পথ যদি না শেষ হয়” – প্রেম, যাত্রা আর শেষ না হওয়া ইচ্ছের এক সারসংক্ষেপ
“আমায় প্রশ্ন করে নীরব আকাশ” – একাকীত্বের সরল কবিতা
“চিঁড়ে-ফুলকপি-নারকেল” – খাঁটি বাঙালিয়ানা রস
“আছে কিছু বাকি” – অনিশ্চয়তার মধ্যেও প্রেমের স্থায়িত্ব
“বহ্নিশিখার মতো জ্বলছে প্রাণ” – বিপ্লব আর চেতনায় ঘেরা সুর
এই গানগুলো শুধু তখনকার নয়, আজও ট্রেনের জানালার পাশে বসে, ব্রেকআপের রাতে, অথবা বিজয়া দশমীর বিকেলে ফিরে ফিরে আসে।পুলকবাবুর গানে বড় কোনো ফিলোসফি নেই। কিন্তু আছে জীবন। আছে ভোরের কুয়াশা, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস, পার্ক সার্কাসের ট্রাম লাইন, আর আছে মেসের জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মনখারাপ। তাঁর গানে প্রেম মানে শুধুই নয়ন-মিলন নয়, সেখানে আত্মীয়তা আছে, স্মৃতির রেশ আছে, হারানোর রকমফের আছে।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু সিনেমার গীতিকার নন। তিনি আধুনিক গান, শিশুদের গান, ছড়া, কবিতা—সবখানেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ।
“পান্তা ভাতে ঘি চাই / বৌদি আমার দুধ কলাই”—এই ধরনের সরল অথচ জনপ্রিয় ছড়াও তাঁর কলম থেকেই এসেছে।
তাঁর (Pulak Bandopadhyay) আত্মজীবনীমূলক লেখাগুলোতেও ফুটে উঠেছে বাংলা গানের অন্তরালের গল্প। আজকের দিনে যখন গান অনেক সময় মেশিনের মতো তৈরি হয়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শেখান—শব্দে মন থাকলে তবেই সেটা গান হয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, সহজ ভাষাতেও হৃদয় কাঁপানো যায়।
তাঁর গান আজও বাংলার প্রতিটি পরিবারের স্মৃতির অ্যালবামে জমা পড়ে আছে।
#PulakBandopadhyay #পুলকবন্দ্যোপাধ্যায় #BanglaGaan #LegendaryLyricist #KolkataVibes #OldBengaliSongs #EmotionInLyrics #BengaliMusicLegend #২মে_জন্মদিন #GaanerKobi
আরও পড়ুন :
উদ্বোধনেই ২ লক্ষ পুণ্যার্থীর ঢল, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে পারবেন কখন?
WestBengal Board Results 2025 : মেধাতালিকায় এবারও কলকাতাকে টেক্কা দিল জেলা