Bangladesh Teesta China Project
ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রংপুরে সম্প্রতি চীনা সহায়তায় তিস্তা নদী পুনর্গঠন ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদী মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবিতে রাস্তায় নামেন। এই প্রকল্পটি চীনা সহায়তায় বাস্তবায়িত হতে চলেছে এবং এতে নদী পুনর্গঠন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উন্নয়ন এবং অবকাঠামো সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে । স্থানীয় মানুষ আশা করছেন, প্রকল্পটি নদী তীরে বসবাসকারি কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তবে প্রকল্পটি শুধু বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারতের জন্যও এটি কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রকল্পের নিকটবর্তী শিলিগুড়ি করিডরকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এই করিডর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। তাই নদীর জল নিয়ন্ত্রণে চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের স্বার্থকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিস্তা নদী বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীর জল মূলত সেচ, কৃষি উৎপাদন এবং স্থানীয় জীবিকায় ব্যবহার করা হয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো নদী পুনর্গঠন, বাঁধ নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি উন্নয়ন।চীনা প্রতিষ্ঠান POWERCHINA এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর জল নিয়ন্ত্রণ, বন্যা থেকে সুরক্ষা, এবং কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হবে।
শিলিগুড়ি করিডর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রাখে। এটি ভারতের কৌশলগত ও সামরিক সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিস্তা নদীর জল নিয়ন্ত্রণে চীনের সরাসরি অংশগ্রহণ ভারতের এই করিডরের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।যদি নদীর জল ভাগাভাগি ও প্রবাহ চীনা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের ওপর হুমকি তৈরি হতে পারে।
প্রকল্পটি ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তিস্তা নদীর জলবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক চলছে। চীনা সহায়তায় এই প্রকল্প পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নদীর জল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রভাব কমে গেলে দক্ষিণ এশিয়ার জলনীতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রভাবিত হবে।
বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। POWERCHINA রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। চীনের এই পদক্ষেপ ভারতের দৃষ্টি থেকে দেখা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলার এক প্রক্রিয়া হিসেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিস্তা নদী প্রকল্প কেবল নদী সংরক্ষণ বা কৃষি উন্নয়নের প্রকল্প নয়; এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় কৃষক এবং সাধারণ মানুষ এই প্রকল্পের থেকে একাধিক সুবিধা আশা করছেন। নদী পুনর্গঠন ও বাঁধ নির্মাণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উন্নয়ন এবং জীবনমান বৃদ্ধি করবে। তবে, নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে ভারতীয় উদ্বেগ প্রকল্পকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা মূলত চীনা সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন। সরকার জানাচ্ছে, প্রকল্পটি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে, যদিও আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা এবং সমঝোতা ছাড়া সমস্যা সমাধান কঠিন। নদী ব্যবস্থাপনা, জল্ বণ্টন এবং কৌশলগত স্বার্থ—সব বিষয়েই সমঝোতা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা এবং চীনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা অপরিহার্য। কেবলমাত্র এই ভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার জলনীতি এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন :
তালিবান সরকার কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল, পাকিস্তানে জলসঙ্কটের আশঙ্কা