West Bengal SSC teacher recruitment exam 2025
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : অবশেষে নির্ধারিত সময়েই শুরু হলো পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা (West Bengal SSC teacher recruitment exam 2025)।রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টা থেকে সারা রাজ্যের ৬৩৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়। দীর্ঘ আইনি জটিলতা, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার উত্তাপ এবং রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও সময় মতো পরীক্ষা আয়োজন করতে পারা প্রশাসনের কাছে বড় সাফল্য হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
২০১৬ সালে আয়োজিত শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল হয়েছিল। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়। পাশাপাশি হাজারো যোগ্য প্রার্থী বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকে ন্যায়ের দাবি তুলেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটেই নতুন পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে। তাই এবারের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের মধ্যে যেমন আশা জেগেছে, তেমনি উত্তেজনা ও চাপও ছিল প্রবল।
এসএসসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের পরীক্ষায় মোট ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীও রয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি—যা মোট অংশগ্রহণকারীর প্রায় ১০ শতাংশ। পরীক্ষার সময় ছিল দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। বিশেষ সক্ষম প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত আধ ঘণ্টা বরাদ্দ করা হয়েছে।
সব কেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের দেহতল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল যাতে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস বা অনিয়ম না ঘটে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিশন ১,৮০৬ জন ‘দাগি’ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এরা আগের দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকায় এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি পাননি। কমিশনের দাবি, এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরবে।
অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে ‘অনদাগি’ শিক্ষকরা নতুন করে আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন। কমিশন তাদের জন্য আলাদা পোর্টাল খুলেছে, যেখানে তারা সহজ শর্তে পুনরায় আবেদন করতে পারছেন।
কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট দু’পক্ষ থেকেই এই পরীক্ষা নিয়ে সরাসরি নজরদারি চলছে। হাইকোর্ট আগেই জানিয়েছিল, কোনো অবস্থাতেই পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীরা যেন নতুন প্রক্রিয়ায় ঢুকতে না পারেন। সুপ্রিম কোর্টও পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেয় এবং কমিশনকে সময় মতো পরীক্ষা সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়। আদালতের কড়া অবস্থানের কারণেই শেষ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়নি।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বহু প্রার্থী জানান, এতদিন ধরে তারা ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছেন। এবার পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়ায় তাদের আশা বেড়েছে। এক পরীক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই সঠিক যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ হোক। এত লড়াইয়ের পর এবার ন্যায্য সুযোগ আসুক।”
অন্যদিকে বাদ পড়া ‘দাগি’ প্রার্থীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যদিও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা কোনো আইনি সুবিধা পাচ্ছেন না।
রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধী উভয়ই এই নিয়োগ দুর্নীতিকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়েছে। বিরোধীরা শাসক দলের ওপর ঘনিষ্ঠদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল। অন্যদিকে রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, তারা আদালতের নির্দেশ মেনেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। শনিবারের শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা অন্তত কিছুটা হলেও সরকারের পক্ষে স্বস্তির। তবে আসল চ্যালেঞ্জ হবে, নির্বাচিতদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়।
এবার নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে, কমিশন দ্রুত গ্রুপ C এবং গ্রুপ D পদের জন্যও নিয়োগ চালু করবে। ইতিমধ্যেই ২,৯৮৯ ও ৫,৪৮৮ শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদন নেওয়া হবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
শিক্ষাক্ষেত্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সফল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে। তবে যে আস্থা আদালত ও প্রার্থীরা হারিয়েছিলেন, তা ফিরে পেতে কমিশনকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
আরও পড়ুন :
“আমি চাই দল ঐক্যবদ্ধ থাকুক। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থ বাদ দিয়ে আমি দায়িত্ব ছাড়ছি।”
মোদী সরকারের E20 সিদ্ধান্তে কমছে বাইক-গাড়ির মাইলেজ? জেনে নিন সত্যিটা