Caribbean Citizenship By Investment
ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাধারণত কোনো দেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে বহু বছর ধরে বসবাস, চাকরি, ভাষা পরীক্ষা বা বিবাহের মতো জটিল নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাঁচটি দেশ এই প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। এখন শুধু বাড়ি কিনলেই মিলতে পারে সেই দেশের নাগরিকত্ব (Caribbean Citizenship By Investment) —এমনটাই প্রস্তাব দিচ্ছে অ্যান্টিগা ও বারবুডা, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া।
মাত্র ২ লাখ ডলারেই নাগরিকত্ব
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলেই এই পাঁচ দ্বীপরাষ্ট্রে বাড়ি কেনা ও নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। নাগরিকত্ব বিনিময়ে বিনিয়োগ (Citizenship by Investment বা CBI) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই পাসপোর্ট দিয়ে যুক্তরাজ্য, ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলসহ প্রায় ১৫০টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। ফলে এটি শুধু বসবাসের সুবিধা নয়, বরং এক ধরনের ‘ভারী’ আন্তর্জাতিক চলাচলের স্বাধীনতা প্রদান করে।
“জন্মভূমিতেও জায়গা নয়?” — মার্কিন সেনেটরের বিতর্কিত প্রস্তাবে উত্তাল নাগরিকত্ব বিতর্ক
ট্রাম্পের ‘ডিপোর্ট’ হুমকি: এলন মাস্কের বিরুদ্ধে রাজনীতির নতুন অস্ত্র?
কর ছাড় ও দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা
এই পাঁচটি দেশের আরও বড় আকর্ষণ হলো কর-ব্যবস্থা। বহু ক্ষেত্রে এই দেশগুলোতে নেই সম্পদ কর, উত্তরাধিকার কর বা আয়কর। এমনকি নতুন নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও নিজের দেশের পাসপোর্ট ধরে রাখা যায়। অর্থাৎ, দ্বৈত নাগরিকত্বের পূর্ণ স্বাধীনতা।
অ্যান্টিগার একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট নাদিয়া ডাইসন জানান, বর্তমানে ৭০ শতাংশ বাড়ি ক্রেতাই নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্যেই বিনিয়োগ করছেন, যাঁদের বেশির ভাগই মার্কিন নাগরিক। “আগে লোকজন জীবনযাপনের মানের জন্য বাড়ি কিনতেন, এখন তারা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে চায়, যেখান থেকে পাসপোর্টও মিলবে।”
সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
তবে এমন লোভনীয় প্রস্তাবের পেছনে রয়েছে বিতর্কও। অনেকেই এই নীতিকে ‘নাগরিকত্বের বাণিজ্যিকীকরণ’ হিসেবে দেখছেন। ২০১২ সালে যখন অ্যান্টিগা সরকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে এই প্রকল্প চালু করে, তখন থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তাদের মতে, নাগরিকত্ব কোনও ব্যবসায়িক পণ্য নয়।
এমনকি অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশ যেমন সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিনসের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস এই প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “নাগরিকত্ব কোনো বিক্রয়ের বস্তু হতে পারে না।”
আন্তর্জাতিক মহলেও এই প্রকল্প ঘিরে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তারা এই ধরনের পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার বাতিল করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এতে কর ফাঁকি ও অর্থনৈতিক অপরাধের আশঙ্কা রয়েছে।
কড়া নিয়মের আশ্বাস, টিকে থাকার লড়াই
এতসব বিতর্ক সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট পাঁচটি দেশ একযোগে এই প্রকল্প টিকিয়ে রাখতে কড়া নজরদারি ও সংস্কারের পথে হেঁটেছে। তারা যৌথভাবে একটি আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করেছে এবং নাগরিকত্ব চাওয়া আবেদনকারীদের জন্য ইন্টারভিউ বাধ্যতামূলক করেছে। পাশাপাশি এক দেশে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে অন্য দেশে আবেদন করার পথও বন্ধ করা হয়েছে।
অর্থনীতির মেরুদণ্ড এই পাসপোর্ট বিক্রি
এই পাসপোর্ট বিক্রিই এখন দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই প্রকল্পগুলো থেকে আসা বিনিয়োগ দেশগুলোর মোট জিডিপির ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত গঠন করছে।
সেন্ট কিটসের সাংবাদিক আন্দ্রে হুই বলেন, “এই প্রোগ্রাম আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ এখন বুঝতে পারছে, এই অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে এবং কিভাবে উন্নয়ন হচ্ছে।”
আরও পড়ুন :
৬টি সম্ভাব্য যুদ্ধ থামানোর দাবি ট্রাম্পের, তালিকায় ভারত-পাকিস্তানও
মেসির হাতে গোলাপি রোলেক্স ঘড়ি, দাম ১১ কোটি টাকা!