Breaking News

DalaiLama 1959Escape

দলাই লামার ছদ্মবেশে পালানোর নাটকীয় ইতিহাস: তিব্বতের প্রাসাদ থেকে ভারতের অভিমুখে এক বিপজ্জনক যাত্রা

১৯৫৯ সালের ১৭ মার্চ রাতে তিব্বতের দলাই লামা একজন সৈন্যের ছদ্মবেশে তাঁর প্রাসাদ থেকে গোপনে বেরিয়ে পড়েন। দুই সপ্তাহ ধরে ভয়ংকর অভিযান শেষে তিনি ভারতে পৌঁছন। ভারত সরকার তাঁকে আশ্রয় দেয় এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের নতুন অধ্যায়।

DalaiLama 1959Escape: A Historic Flight %%page%% %%sep%% %%sitename%%

DalaiLama 1959Escape

ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিব্বতের আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা ১৪তম দলাই লামার জীবন কেবল আধ্যাত্মিক সাধনা বা রাজনৈতিক বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর জীবনের এক অধ্যায় রীতিমতো থ্রিলার উপন্যাসের মতো। ১৯৫৯ সালের ১৭ মার্চ রাতে চিনা বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে তিনি নিজের প্রাসাদ ‘নরবুলিংকা’ থেকে একজন সৈন্যের ছদ্মবেশে গোপনে (DalaiLama 1959Escape) বেরিয়ে পড়েন। এই নাটকীয় পলায়ন কেবল ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়, এটি তিব্বতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকেও বদলে দিয়েছিল।


পরিস্থিতির পটভূমি: লাসায় উত্তাল জনতা, চীনা সেনার হুমকি

১৯৫০-এর দশকে চীনের ‘পিপলস রিপাবলিক’ কর্তৃক তিব্বত দখলের পর থেকেই অঞ্চলটি ক্রমে অস্থির হয়ে ওঠে। ১৯৫৯ সালে দলাই লামার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় তিব্বতের রাজধানী লাসায় জড়ো হয় লাখো মানুষ। তাঁদের ভয় ছিল, দলাই লামাকে চীনারা হয় অপহরণ করবে, নয়তো হত্যা।

এই সময় চীনা সেনা লাসার চারপাশ ঘিরে ফেলে। দলাই লামা ও তাঁর অনুগামীরা সিদ্ধান্ত নেন—এখনই পালাতে হবে। কারণ, প্রতিরোধ করলে হয়ত প্রাণে বাঁচা যাবে না, আর আত্মসমর্পণ করলে তিব্বতের স্বাধীন আত্মা ধ্বংস হবে।


ছদ্মবেশে পালানো: সৈন্য সেজে ইতিহাসের পাতা থেকে অদৃশ্য

১৭ মার্চ ১৯৫৯। রাত গভীর। দলাই লামা তাঁর রাজপ্রাসাদ নরবুলিংকা থেকে বেরিয়ে পড়েন—চেনা পোশাকে নয়, বরং এক জন সাধারণ তিব্বতি সেনার পোশাকে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন কিছু অনুগামী, রাজকর্মচারী, নিরাপত্তারক্ষী এবং পরিবারের সদস্যরা। একেবারে নীরবে তাঁরা যাত্রা শুরু করেন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে, ভারত সীমান্তের দিকে।

এই ছদ্মবেশ ছিল প্রয়োজনীয়। কারণ যদি চীনা সেনারা তাঁকে চিনে ফেলত, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হত্যা করা হত বা আটক করে চিনে নিয়ে যেত।

দালাই লামার উত্তরসূরী ঘিরে নতুন যুগের সূচনা? ধর্মশালায় উত্তাল রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক আবহ, চিনে উদ্বেগ

বাংলাদেশ থেকে বিদেশি স্ত্রী কেনার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্ক করল ঢাকার চীনা দূতাবাস


ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান: নদী, পাহাড় আর চীনা টহল

এই গোপন অভিযাত্রা ছিল প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দলাই লামা ও তাঁর সঙ্গীরা পার হন খাড়াই পাহাড়, তুষারাবৃত গিরিপথ ও ভয়ানক নদী। তাঁরা দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকতেন, আর রাতের অন্ধকারে হাঁটতেন। চীনা সেনারা তাঁদের খুঁজছিল, তাই টহলের মধ্য দিয়েই তাঁদের পার হতে হয়েছিল।

ব্রহ্মপুত্র নদ পার হওয়ার সময় তাঁরা ইয়াকের চামড়া দিয়ে তৈরি নৌকায় ভরসা করেন। আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল, খাদ্য ও বিশুদ্ধ জলের অভাব ছিল চরম, তবুও দলের কেউ আত্মসমর্পণ করেননি।


ভারতের মাটিতে প্রথম পা, আসাম রাইফেলসের স্বাগত

৩১ মার্চ ১৯৫৯। প্রায় ১৫ দিনের কষ্টসাধ্য যাত্রা শেষে দলাই লামা ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বমডিলা সীমান্তে পৌঁছন। সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আসাম রাইফেলস তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। সেই সময় যিনি প্রথম দলাই লামাকে চিনে ফেলেছিলেন, তিনি ছিলেন ল্যান্স নায়েক নরেন চন্দ্র দাস। পরবর্তীকালে দলাই লামা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানান।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাঁর জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের ঘোষণা দেন, যা তিব্বতের ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল।


নতুন অধ্যায়: নির্বাসিত সরকারের জন্ম

ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দলাই লামা দেরাদুন এবং পরে ধর্মশালায় নির্বাসিত তিব্বতি সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই তিনি তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যান শান্তিপূর্ণ পথে।

তাঁর বার্তা সবসময় অহিংসা ও ধৈর্যের—“আমরা চিনের প্রতি ঘৃণা পোষণ করি না, কিন্তু তিব্বতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচিতি রক্ষা করাটাই আমাদের লক্ষ্য।”

দলাই লামার এই পালানো এবং ভারত কর্তৃক তাঁকে আশ্রয় দেওয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বিশাল বার্তা বহন করে আনে । চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় বহু দেশ। একই সঙ্গে ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চাপও সৃষ্টি হয়, যার প্রতিফলন দেখা যায়  ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধে।

আরও পড়ুন :

‘ক্যায়া কারু সজনী আয়ে না বলম’ খ্যাত বর্ষীয়ান অভিনেতা ও প্রযোজক ধীরজ কুমার প্রয়াত

সৌরভ গাঙ্গুলীর বায়োপিকের শুটিং পিছোল, ২০২৬-এ শুরু শুটিং প্রস্তুতি

ad

আরও পড়ুন: