গাজা যুদ্ধ মানবিক সংকট
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ আজও চলছে, আর এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সাধারণ প্যালেস্তানিয় জনগণ। প্রতিদিনের হামলা, খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সুবিধার অভাব এবং বাস্তুচ্যুতি – সব মিলিয়ে গাজার মানুষ এখন এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক প্যালেস্টাইন নাগরিক মোহাম্মদ মারুফ বলেছেন, “আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। কী বলব? কুকুরের মতো? না, কুকুরের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি আমরা।” তার এই মন্তব্য যুদ্ধের ভয়াবহতার এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে।
ইজরায়েল গাজা সিটির উপর পূর্ণ দখল নিতে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বেইত লাহিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া মোহাম্মদ মারুফ এখন ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। চারপাশে মৃত্যুর হাহাকার, ধ্বংসস্তূপ আর ক্ষুধা – এটাই আজকের গাজার বাস্তবতা।
আবারও গাজার দরজায় ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক, ট্রাম্পের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউসে বৈঠক
ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধ : গাজা শহরে বড়সড় অভিযানের আগে ৫০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ডাকতে পারে ইজরায়েল
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা। তিনি উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকা ছেড়ে পশ্চিম গাজার দিকে রওনা হয়েছেন। তবে তার কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই। তার কথায়, “অবস্থা এত ভয়াবহ হয়ে গিয়েছিল যে, বেরোতে বাধ্য হয়েছি। ভাগ্য ভালো হলে কোথাও তাঁবু খাটানোর জায়গা পাব। কিন্তু কোথাও নিরাপদ নয়, ইজরায়েলিরা সর্বত্র আক্রমণ চালাচ্ছে।”
গাজার ভেতরে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বোমা বর্ষণ এতটাই বেড়েছে যে ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল এবং কমিউনিটি সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে। বেঁচে থাকা মানুষদের সামনে একদিকে ক্ষুধার কষ্ট, অন্যদিকে মৃত্যু আতঙ্ক। খাবার এবং ওষুধের তীব্র সংকটে শিশুরা কষ্টে মারা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল বহুবার ইজরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সতর্ক করছে যে, গাজা অঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় পাচ্ছেন না। খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিদিনই প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেককে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও নিন্দার মাঝেও পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে গাজার অভ্যন্তরে যেসব পরিবার ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছে, তাদের জন্য উদ্ধার কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইজরায়েলি বাহিনী অব্যাহতভাবে বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে।
গাজার সংকট এখন শুধু একটি যুদ্ধ নয়, বরং এটি একটি পূর্ণ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। ক্ষুধা, মৃত্যু আর আতঙ্কের মধ্যে প্যালেস্তানিয়রা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। মোহাম্মদ মারুফের কথার মধ্যেই আজকের গাজার জনগণের যন্ত্রণা ও অসহায়ত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে—“আমরা কুকুরের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি।”
আরও পড়ুন :
মহিলা বিশ্বকাপে ছেলেদের থেকেও বেশি প্রাইজমানি ঘোষণা করল আইসিসি
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন গ্রীক ফরোয়ার্ড ডায়ামান্টাকোস