GazaFamine IsraelBlockade
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : প্যালেস্টাইনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবশেষে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করল জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইনটিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC)। দীর্ঘ কয়েক মাসের সর্বাত্মক অবরোধ ও সীমিত খাদ্য সহায়তা প্রবেশের কারণে এ সংকট আরও ভয়াবহ রূপ (GazaFamine IsraelBlockade নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শত শত শিশু ও বৃদ্ধ অনাহারে মারা যাচ্ছে অথচ ইজরায়েলি সরকার তা অস্বীকার করে আসছে।
আইপিসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজার অন্তত একটি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং আগামী মাসের মধ্যেই তা সমগ্র উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। গাজার প্রায় পাঁচ লাখ চৌদ্দ হাজার মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের সরাসরি শিকার। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষে এ সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখেরও বেশি হতে পারে বলে সংস্থার পূর্বাভাস।
গাজায় চলমান যুদ্ধ, অবরোধ এবং সীমিত সাহায্যের কারণে মানবিক পরিস্থিতি এমনিতেই দুর্বল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে যখন একাধিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জানিয়েছে, শিশুদের অপুষ্টিজনিত মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের অর্ধেকের বেশি অপুষ্টি বা ডায়রিয়ার কারণে মারা যাচ্ছে। ফলে আইপিসি’র এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার বারবার বলছে যে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই এবং পর্যাপ্ত সহায়তা প্রবেশ করছে। তবে জাতিসংঘ, রেড ক্রস এবং চিকিৎসক সংগঠনগুলো এর বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে। তাদের মতে, ইজরায়েলি বাহিনী খাদ্যবাহী ট্রাক আটকে দিচ্ছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে এবং সীমান্ত দিয়ে কেবলমাত্র সামান্য পরিমাণ সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আইপিসি’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ইজরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে। কারণ, দুর্ভিক্ষ ঘোষণা হওয়ার অর্থ হলো ত্রাণ প্রবেশে অযথা বাধা দেওয়াকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে ধরা হতে পারে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ গাজায় জরুরি মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ইজরায়েলকে কিছুটা নমনীয় হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজায় ক্ষুধা এখন আর কেবল খাদ্য সংকট নয়, এটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবিলম্বে অবরোধ তুলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি প্রবেশের ব্যবস্থা না করলে হাজারো মানুষ মারা যাবে। তিনি আরও যোগ করেন যে, শিশুদের জীবনের জন্য প্রতিটি দিনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জানাচ্ছে, ক্ষুধা এখন গাজায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক পরিবার দিন পর দিন শুকনো রুটি ও দূষিত জল খেয়ে বেঁচে আছে। স্কুলগুলোতে খাবারের অভাবে শিক্ষার্থীরা অজ্ঞান হয়ে পড়ছে, আর কৃষি জমিগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদনের আর কোনো সুযোগ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক দাতারা তাদের সহায়তা বাড়ালেও তা গাজার মানুষের কাছে পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ত্রাণ বহনকারী বহু ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে, যেগুলো প্রবেশের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে। ফলে সহায়তা পাঠানোর চেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শুধু গাজার মানুষের জীবন নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। প্রতিবেশী মিশর ও জর্ডানের ওপর শরণার্থী চাপ বাড়তে পারে। একইসঙ্গে পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রবল।
সুতরাং, গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইজরায়েল আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। তবে মানবিক সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের অনুমতি না দিলে গাজায় অচিরেই এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে বড় ক্ষুধাজনিত দুর্যোগ হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন :
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে গ্রেফতার